নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সুযোগ নেই ঐক্যফ্রন্টের

বাংলা নিউজ – সদ্য শেষ হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এমন অভিযোগ নিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিরোধী নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এরই মধ্যে ড. কামাল হোসেন ও বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের ফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। আইন-কানুন দেখে ফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই বলে বলে  জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ করে ফেলেছি। আমরা আইন পর্যালোচনা করে দেখেছি ফলাফল বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল নিয় কেউ সন্তুষ্ট না হলে আদালতে যেতে হবে।
 
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বলছে, চলতি সপ্তাহেই ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ‘নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে’ মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহেও একাধিকার ট্রাইব্যুনালে মামলা করার কথা বলা হয়েছে নির্বাচন কেন্দ্রিক ওই জোটটির পক্ষ থেকে। এজন্য ইসির কাছে নির্বাচনের ফলাফলের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
 
তবে ইসির যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভিন্ন কথা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভোটের প্রক্রিয়ায় অনিয়ম নিয়ে ট্রাইবুনালে মামলা করার বর্তমানে কোনো সুযোগ নেই।
 
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ সংশোধন করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধানটি প্রায় ১৭ বছর আগে তুলে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদের ভোটের প্রক্রিয়া নিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে মামলা করা যায় না। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা যে কোনো সংক্ষুব্ধ প্রার্থী বা দল এখন আর চাইলেও ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।
 
ইসির কর্মকর্তারা বলেন, ট্রাইব্যুনালে না যেতে পারলেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি, অনিয়মের যদি কোনো অভিযোগ কোনো প্রার্থী করেন তাহলে তার হাইকোর্টে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
 
আরপিওর পঞ্চম অধ্যায়ের ৪৯ থেকে ৭২ দফায় এ নিয়ে বিস্তারিত করণীয় বাতলে দেওয়া আছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, যে কোনো নির্বাচনী অনিয়ম নিয়ে হাইকোর্টের একটি আলাদা বেঞ্চে পিটিশন দায়ের করা যাবে। হাইকোর্ট ছয় মাসের পিটিশন নিষ্পত্তির ‘চেষ্টা’ করবেন।
 
পিটিশন দায়েরকারী হাইকোর্ট থেকে সুবিচার পাননি মনে করলে আদেশের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন। তবে এর আগে লিভ টু আপিলের অনুমতি পেতে হবে।
 
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বাংলানিউজকে বলেন, বিরোধী নির্বাচনী জোটের যারা ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার কথা বলছেন, তারা হয়তো বিষয়টি জানেন না। আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার কোনো সুযোগ তারা পাবেন না। ২০০১ সালের পর থেকে এটা আর করা যায় না। বিধানটি সময় আরপিও থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হাইকোর্টে যাওয়ার সুযোগ আছে। এজন্য আরপিওতে আলাদা একটি বেঞ্চ গঠনের জন্য বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এটা নিজ থেকেই নির্বাচনের পরপরই গঠন করেন।
 
ইসি কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ফলাফল ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী চাওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী তথ্য নেই। এক্ষেত্রে তাদের আসনভিত্তিক ফলাফল সরবরাহ করা হতে পারে।
 
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ফলাফলের তথ্য চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন কমিশনের কাছে উত্থাপনের পর তাদের তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের কাছে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল নেই।
 
গত ৩০ ডিসেম্বর ২৯৯ আসনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। গাইবান্ধা-১ আসনের একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় ওই আসনে ভোট স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ওই আসনে আগামী ২৭ জানুয়ারি ভোট হবে। তবে এই আসনে বিএনপি তার প্রার্থী সরিয়ে নিয়েছে।
 
২৯৯ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি, জাতীয় পার্টি ২২টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ২টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ২টি, জাতীয় পার্টি-জেপি ১টি ও তরিকত ফেডারেশন ১টি আসনে জয় পেয়েছে। মহাজোট মোট আসন পেয়েছে ২৮৮টি।
 
অন্যদিকে বিএনপি ৬টি ও গণফোরাম ২টি আসন পেয়েছে। আর স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৩ প্রার্থী। নির্বাচনের পর থেকেই ভোট কারচুপিসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।