অনলাইন ডেস্ক – বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ঢাকায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের নতুন প্রতিনিধি স্টিভেন কোরলিস গতকাল (সোমবার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিচয়পত্র পেশ করতে এলে তিনি প্রস্তাবটি দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিবেশী ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া এবং সৌদি আরব থেকে কথিত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর খবরকেও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। খবর পার্সটুডের।
এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম-এর সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন রেডিও জানান, মিয়ানমারে সম্মানজনক প্রত্যাবাসন হলে রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বুঝতে পারছে সে সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এ অবস্থায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে যে কষ্টের মধ্যে রয়েছে তার চেয়ে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেবার সুযোগকে তারা বরং বিপুলভাবে স্বাগত জানাবে।
বিগত দশকগুলোতে বিভিন্ন সময় মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশগুলোতে (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোনো দেশে) পাঠানো হলেও পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ এটি মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবেও কাজ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। কানাডা সরকার গত বছর বাংলাদেশ থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ তাতে সাড়া দেয়নি।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “ইউএনএইচসিআরের আবাসিক প্রতিনিধিকে বলেছি, যত দিন পর্যন্ত সমস্যার সমাধান না হয়, রোহিঙ্গারা তাদের নিজের দেশে যেতে না পারে—ততদিন পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী প্রক্রিয়া হিসেবে রোহিঙ্গাদের অন্যান্য দেশে ‘রিসেটেল্ড’ করার ব্যবস্থা করা যায়। এ ছাড়া কফি আনান কমিশনের পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে জাতিসংঘকে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে বলেছি।”
তিনি আরো বলেন, “জাতিসংঘের মহাসচিবের সভাপতিত্বে বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের নিয়ে বৈঠক করে এই সমস্যা সমাধানের একটি প্রস্তাব দিয়েছি। এই সমস্যা সমাধানে বিশ্ববাসী কিভাবে ‘শেয়ার’ করতে পারে, কোন দেশ কতজন নিতে পারবে আলোচনা করা প্রয়োজন।”
ভারত সীমান্ত দিয়ে এ দেশে প্রবেশের জন্য রোহিঙ্গাদের অপেক্ষা এবং সৌদি আরব থেকে রোহিঙ্গাদের এ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা শুনছি, দেখছি। অনেকে সীমান্তের শূন্যরেখায় আছে। আমরা তাদের গ্রহণ করিনি। আমরা ঢুকতেও দিইনি।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ভারত থেকে কিভাবে পাঠাচ্ছে আমি জানি না। তিনি দিল্লিতে কথা বলবেন। বিষয়টি যাতে সুরাহা হয় সে জন্য হাইকমিশনারকে বলা হয়েছে।”
এদিকে ঢাকায় ইউএনএইচসিআরের নতুন প্রতিনিধি স্টিভেন কোরলিস গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে তাঁর সংস্থা সরকারকে পূর্ণ সহায়তা দেবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-