শাহরিয়ার হাসান,বার্তা২৪ :
মরণনেশা ইয়াবার বিস্তার রোধে কঠোর সরকার। আর মাদকের বিস্তার রোধে ইয়াবার প্রবেশদ্বার খ্যাত টেকনাফ এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘মাথাব্যাথা’র প্রধান কারণ। ফলে বাহিনীগুলো মাদকের বিস্তাররোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
জানা গেছে, টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মাদকের অবাধ প্রবেশ রোধ এবং নিরাপত্তা জোরদার করতে র্যাব-১৫ ব্যাটেলিয়ান গঠন করা হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এই নতুন ব্যাটেলিয়ন উদ্বোধন করা হতে পারে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবটি অনুমোদন পেয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে লোকবল নিয়োগে কাজ শেষ হবে।
এ বিষয়ে র্যাব-৭ এর টেকনাফ ক্যাম্প কমান্ডার লেঃ মির্জা শাহেদ মাহতাব (এক্স) বিএন বলেন, ‘অভিযান চলমান থাকায় মাদক বিস্তার রোধ হয়েছে। টেকনাফ থেকে মাদক নির্মূল করতে র্যাব-১৫ ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হচ্ছে।’
মাদকবিরোধী র্যাবের কার্যক্রম সর্ম্পকে জানতে চাইলে র্যাবের মুখপাত্র মুফতি খান বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই মাদক প্রতিরোধে কাজ করছি। এখন মাদক ব্যবসায়ীদের বিচারণ আগের মতো নেই। তবে মাদকের প্রবেশদ্বার বন্ধ করতে শিগগিরই নতুন ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হবে।’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী জানান, শুধু অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই তারা ভালো হয়ে যাবে না। যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
এরই অংশ হিসেবে টেকনাফে আত্মসমর্পণে ইচ্ছুক ৬৩ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে পুলিশ হেফাজতে সেফহোমে রাখা হয়েছে। যাদের ২৫ জন গডফাদার ও ৩৮ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী। আরো শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশাপাশি পলাতক ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে।
সূত্রে জানা গেছে, ইয়াবা কারবারীদের আত্মসমর্পণের পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া দেখভাল করছে পুলিশ সদরদফতর। সেখানকার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। নতুন বছরে এখন পর্যন্ত র্যাব, পুলিশ, বিজিবি সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৪ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ জনই টেকনাফের।
আরো জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তালিকায় কক্সবাজারের ইয়াবা গডফাদার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় ৭৩ জন। এর মধ্যে মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে ১০ জন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা টেকনাফকে মাদকমুক্ত করতে চাই। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলে তাকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে। যারা আত্মসমর্পণ করেছে তারা সবাই দোষ স্বীকার করেছে।’
পুলিশ সদরদফতরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কে বলেন, ‘টেকনাফ-কক্সবাজার এলাকা যদি মাদকমুক্ত রাখা যায়। তাহলে সারাদেশ মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা পাবে। তাই আইন-শৃঙ্খলা সংস্থাগুলো এখন টেকনাফ কেন্দ্রীক মাদকবিরোধী অভিযানে সক্রিয়।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৪ মে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে সারাদেশে ৪ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। যার মধ্যে কক্সবাজারেই ৪২ জন। আর ৪২ জনের মধ্যে ৩৮ জনই টেকনাফের। এছাড়াও অভিযানে কোটি কোটি টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে ও মামলা হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৫২২টি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-