কক্সবাজারে দুগ্ধপোষ্য সন্তানসহ সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী পালালো দেবরের সঙ্গে

বিশেষ প্রতিবেদক :


কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ায় পরকিয়া প্রেমে আসক্ত এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তানসহ দেবরের হাত ধরে উধাও হয়েছে। এ ঘটনায় প্রবাসী স্বামীর নামে মামলা দিয়ে উল্টো হয়রানির হুমকী দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

পরকিয়া প্রেমিকা নাছিমা আক্তার (২৩) গত ২০ জানুয়ারী টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কোনখার পাড়ার বাপের বাড়ী থেকে প্রেমিক দেবর আব্দুল রোমানের (২৫) সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার এ ঘটনা ঘটেছে।

নাছিমা আক্তার টেকনাফের কোনখার পাড়ার বনি আমিনের মেয়ে।

তার সৌদি প্রবাসী স্বামী আব্দুল মুবিন (৩৬) কক্সবাজার শহরের মধ্যম টেকপাড়ার শফিকুল ইসলামের ছেলে।

এ দম্পতির ২২ মাস বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

এ ঘটনায় প্রেমিকা নাছিমা আক্তারকে অপহরণ করা হয়েছে দাবি করে মা নূরজাহান বেগম (৪২) বাদী হয়ে প্রেমিক দেবর আব্দুল রোমান সহ অজ্ঞাত ২/৩ জনকে অভিযুক্ত করে গত ২৭ জানুয়ারী কক্সবাজার সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করে বলে জানান ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান।

ওসি খায়রুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় নিখোঁজ নাছিমার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। পরকিয়া প্রেমের জেরে দুগ্ধপোষ্য এক শিশু সন্তানসহ দেবরের সঙ্গে পালিয়ে গেছিল।

” ঘটনায় নাছিমা আক্তারের মায়ের থানায় দায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৯ জানুয়ারী সন্ধ্যায় দেবর আব্দুল রোমানের সন্ধানে শ্বশুড় শফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। পরে বাবাকে থানার খবরে ছেলে রোমান থানায় উপস্থিত হয়। এসময় পুলিশ নাছিমার সন্ধানে পিতা-পুত্রকে আটকে রাখে। ”

এ প্রেক্ষিতে পরদিন মোহাম্মদ নুরু ( আব্দুল রোমানের বন্ধু ) নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ নাছিমাকে ৩ দিনের মধ্যে সন্ধান দেয়ার শর্তে জিন্মায় পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয় বলে জানান খায়রুজ্জামান।

কক্সবাজার শহরের মধ্যম টেকপাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের ছেলে সৌদি প্রবাসী আব্দুল মুবিনের সঙ্গে গত ২০১৪ সালে টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কোনখার পাড়ার বনি আমিনের মেয়ে নাছিমা আক্তারের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাস পর তিনি আবারো সৌদি আরবে চাকুরিতে ফিরে যান।

এরপর থেকে বছর দেড় বছর অন্তর প্রবাসী মুবিন দেশে এসে ২/৩ মাস অবস্থানের পর ফিরে যেতেন প্রবাস জীবনে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংসার বেশ সুখেই চলছিল। এর মধ্যে গত বছর আড়াই বছর আগে মুবিন ও নাছিমার সংসারে এক কন্যা সন্তানের জন্ম নেয়।

এদিকে স্বামী প্রবাসে থাকার সুবাদে গত বছর দেড়েক আগে থেকে শ্বশুড় শ্বাশুড়ীর সঙ্গে বাড়ীতে অবস্থানকারি দেবর আব্দুল রোমানের সঙ্গে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে নাছিমা আক্তার। তাদের সম্পর্ক এক পর্যায়ে শারীরিকভাবে জড়িয়ে পড়ে। যদিও বাড়ীতে থাকা শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী ও প্রবাসী স্বামীর কাছে এতদিনেও দেবর-ভাবীর অনৈতিক এ সম্পর্কে বিষয়টি প্রকাশ পায়নি।

সম্প্রতি গত ৮ জানুয়ারী সৌদি প্রবাসী স্বামী মুবিন দেশে আসেন। এর ৩ দিন পর তিনি স্ত্রী নাছিমা ও শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে টেকনাফের শ্বশুড় বাড়ী বেড়াতে যান। দুইদিন অবস্থানের পর পারিবারিক কাজের প্রয়োজনে স্ত্রী ও সন্তানকে রেখে তিনি কক্সবাজার ফিরেন।

এরই মধ্যে গত ২০ জানুয়ারী বাপের বাড়ী থেকে নাছিমা আক্তার দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তানসহ দেবর আব্দুল রোমানের হাত ধরে পালিয়ে যায়।

এরপর ঘটনাটি জানতে পেরে স্বামী আব্দুল মুবিন বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রী ও সন্তানের খোঁজ খবর নেন। তিনি ৫ দিন পরও সন্ধান না পেয়ে গত ২৫ জানুয়ারী কক্সবাজার সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।

এদিকে বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারী দেবর আব্দুল রোমান ও তার বন্ধু মোহাম্মদ নুর নিখোঁজ থাকা নাছিমা আক্তারকে শিশু সন্তানসহ সন্ধান পাওয়ার খবর দেন বলে জানিয়েছেন ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান।

এসময় ঘটনাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছুটিতে থাকার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ” পরে থানার এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করে বাদী বিবাদী উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিই। এতে উভয়পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে প্রবাসীর স্ত্রী দেবরের সঙ্গে পালিয়ে আত্মগোপনে থাকার সত্যতা স্বীকার করে। ”

” এতে কার জিন্মায় নাছিমাকে হস্তান্তর করা হবে জানতে চাওয়া হয়। মা নূরজাহান বেগম জিন্মায় নিতে চাইলেও মেয়ে অসম্মতি জানায়।এক পর্যায়ে নাছিমা দেবর আব্দুল রোমানের সঙ্গে সংসার করার কথা জানায়। এতে দেবর-ভাবী সম্মতি জানালে আপাতত তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। ”

তবে চুড়ান্ত সমাধানের জন্য ঘটনার তদন্তে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার ছুটি শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বাদী বিবাদী পক্ষকে অবহিত করা হয় বলে জানান ওসি (তদন্ত)।

এ নিয়ে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারী ঘটনার ব্যাপারে চুড়ান্ত সমাধানের জন্য পরবর্তী শালিসী বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান খায়রুজ্জামান।

এদিকে স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় হতবিহ্বল প্রবাসী আব্দুল মুবিন। তিনি এ ঘটনায় এক বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

ঘটনার ব্যাপারে আব্দুল মুবিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ না কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ নিয়ে মুবিনের পিতা শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে ঘটনাটি আপাতত সামাজিকভাবে সমাধানের পর্যায়ে থাকার তথ্য জানিয়ে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

তবে ঘটনার ব্যাপারে কথা বলতে নাছিমা আক্তারের মা নূরজাহানে সঙ্গে মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলে দেবর আব্দুল রোমানের সঙ্গে মেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন।

নূরজাহান বলেন, ” নাছিমা ও রোমানকে উদ্ধারের পর পুলিশ তাকে খবর দেয়। পরে থানায় উভয়পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে মেয়ে দেবরের সঙ্গে সংসার করতে সম্মতি জানালে রোমানের জিন্মায় ছেড়ে দেয়। ”

এদিকে নূরজাহানের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনটি তুলে দেন নাছিমার চাচা ওসমান গনির হাতে।

এসময় ওসমান গনিও দেবর-ভাবীর মধ্যে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক থাকার জেরে পালিয়ে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ” ঘটনাটি এখন সামাজিকভাবে সমাধানের পর্যায়ে রয়েছে। উভয়পক্ষের লোকজন এ নিয়ে তাদের মধ্যে সামাজিকভাবে বিয়ের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। ”

ঘটনায় স্বামী আব্দুল মুবিনের অপরাধ থাকার তথ্য জানিয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ওসমান। সূত্র- সিবিএন