কক্সবাজারে মনোনয়ন পেতে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডনদের দৌড়ঝাঁপ

কক্সবাজারের টেকনাফে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আবারো তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারীরা প্রার্থী হতে তোড়জোড় শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত করা এখন তাদের টার্গেট।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের পাশাপাশি নারী ভাইস চেয়ারম্যানের তিনটি পদেই নিজেদের পছন্দের লোককে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দিতে একাট্টা ইয়াবা ডনরা। মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে সীমান্তের ইয়াবা ডনরা রাজধানী ঢাকা এবং কক্সবাজারে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

ইতিমধ্যে টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে প্রায় শতাধিক চুনোপুটিরা আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তবে টেকনাফ উপজেলা পরিষদে যেসব তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডন নির্বাচনে লড়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন তাদের কেউই আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় নেই। ইয়াবা কারবারে সম্পৃক্ত বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এসব ব্যক্তিরা বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করে দিয়েছেন বলে সীমান্ত জনপদে চাওর হয়ে পড়েছে।

সেই সঙ্গে ইয়াবা সিন্ডিকেটের এসব প্রভাবশালী ব্যক্তি কক্সবাজারে জেলা আওয়ামী লীগকে ম্যানেজ করে তাদের তালিকা ঢাকায় প্রেরণেরও তদবির করছেন। কালো টাকাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সীমান্তের কারবারিরা ক্ষমতার চেয়ার বাগিয়ে নিতে এখন ব্যস্ত।

ইতিমধ্যে টেকনাফে প্রাথমিকভাবে একটি ধাক্কা খেয়েছে পাচারকারীর দল। উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের পরামর্শে প্রাথমিক তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের দিকেই তাদের চোখ। তাঁরা চাইছে কক্সবাজার জেলা থেকেই কেন্দ্রে পাঠানো হোক তাদের নাম।

সীমান্তের ইয়াবা কারবারিরা আশা করছেন, কক্সবাজার থেকে প্রেরিত তালিকায় নাম থাকলেই কেন্দ্রকে যেকোনোভাবে ম্যানেজ করতে সক্ষম হবে। ইয়াবার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্সের অংশ হিসেবে ইতিপূর্বে ইয়াবা সিন্ডিকেটের সবচেয়ে পছন্দের নেতা আবদুর রহমান বদি সংসদ-সদস্য পদে দলীয় মনোনয়ন পাননি। বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এখন উপজেলা চেয়ারম্যান পদটি হাতছাড়া হলে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে হবে। এই আশঙ্কা থেকেই নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে ইয়াবা পাচারকারীরা।

জানা গেছে, ইয়াবা পাচারকারীরা চেয়ারম্যান হিসেবে পেতে চাইছে জাফর আহমদকে। টেকনাফ উপজেলা বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী জাফর আহমদ টেকনাফ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জরিপে আবদুর রহমান বদির পরপরই তাকে অন্যতম বড় ইয়াবা পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইয়াবা পাচারকারী হিসেবে শুধু জাফর আহমদ নন, তার চার সন্তানের নামও উঠে এসেছে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে। 

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ইয়াবা সিন্ডিকেটের পছন্দের প্রার্থী মৌলভি রফিক আহমদ। যিনি নিজেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারী। অপরদিকে নারী ভাইস চেয়ারম্যানের পদে মনোনয়নের জন্য দৌঁড়ঝাপ করছেন সীমান্তের আরেক ইয়াবা কারবারি এবং বিএনপি নেতার স্ত্রী। ওই কারবারি এবং বিএনপি নেতা ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন-‘ আইনজীবী হিসেবে আমি চার দশক অতিক্রম করছি। এই সুদীর্ঘ জীবনে কখনো কোন মাদক মামলার আসামির পক্ষে মামলা পরিচালনা করিনি। যদিও এসব মামলায় সবচেয়ে বেশি অর্থ পাওয়া যায়। সেখানে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে আপসের প্রশ্নই আসে না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরো বলেন, জেলার পাশাপাশি কেন্দ্রেও মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি। মাদক পাচারকারীরা যাতে সংগঠনের মনোনয়ন না পায় তা আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা আমিসহ সংগঠনের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের কর্তব্য। 

প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর কক্সবাজার জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন যাতে তালিকাভুক্ত কোনো ইয়াবা কারবারিকে উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন দেওয়া না হয়। কালেরকন্ঠ