মাছ ব্যবসায়ী থেকে শীর্ষ ইয়াবাকারবারি হেলাল

কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক :

একসময়ের মাছ ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন এখন টেকনাফের তালিকাভুক্ত ইয়াবাকারবারি। বর্তমানে তিনি ওমানে থেকে অনলাইনে নিয়ন্ত্রণ করছেন ইয়াবার ব্যবসা। টেকনাফের স্থানীয়রা জানান, আগে মাছের ব্যবসা করে ঠিকমতো সংসার চলাতেই হিমশিম খেত হেলাল।

পরে বাড়তি আয়ের আশায় সে জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা ব্যবসায়। মিয়ানমার থেকে মাছের ট্রলারে করে বস্তা ভর্তি ইয়াবা এনে সে ও তার সহযোগীরা তা খালাস করত কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ডকে। আর এতেই রাতারাতি ভাগ্য বদলে যায় হেলালের। এখন চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে ইছানগর এলাকায় সে বিলাসবহুল বাড়ির মালিক।

পুলিশ সূত্র জানায়, সবাই জানে হেলাল উদ্দিনের বাড়ি টেকনাফের হ্নিলা ইউনিয়নে। কিন্তু তার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পুলিশ কিংবা স্থানীয় কারও কাছে নেই। শুধু তথ্য আছে, বস্তাভর্তি করে টেকনাফ থেকে সাগরপথে মাছের ট্রলারের আড়ালে ইয়াবা আনে হেলালের সহযোগীরা।

তার বিরুদ্ধে কর্ণফুলী থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। ইছানগর এলাকায় পাঁচ কাঠা জমির ওপর তার বিলাসবহুল চারতলা ভবন ঘিরে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। কারণ নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ছাড়া কাউকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গতিবিধি নজরদারির জন্য বাড়িটির বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। বাড়িটির সামনের পাঁচ কাঠার খালি প্লটটিও তার।

ওই বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক আবদুস সামাদ জানান, হেলাল উদ্দিন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সপরিবারে ওমানে থাকেন। সেখান থেকেই তিনি বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য বিষয় তদারক করেন। হেলাল উদ্দিনের আয়ের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সঠিক খবর জানি না। কেউ বলে ইটের আবার কেউ বলে তিনি গুটি ব্যবসা করেন। আমার সঙ্গে তার দেখা হয় না। ইয়াবাকে চট্টগ্রামের অনেক লোক গুটি বলে ডাকেন।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সভায় বিষয়টি নিয়ে বারবার কথা বলেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও বলেছি অপরিচিত লোকজন বাইরে থেকে এসে রাতারাতি জমি কিনে বহুতল ভবন করছেন। তারা কারা, তাদের বিস্তারিত পরিচয় এবং আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে চর পাথারঘাটা ও চরলক্ষ্যায় এ ধরনের পাঁচটি বাড়ি শনাক্ত করেছি। হেলাল একজন বড় মাপের ইয়াবাকারবারি। পলাতক থাকায় তাকে আমরা ধরতে পারছি না। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে ইয়াবাকারবারিদের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থেকে মাছের ট্রলারে করে এক বস্তা ইয়াবা আসে হেলাল উদ্দিনের। কর্নফুলী নদীর সোনা মিয়া হাজীর ডকে বস্তাটি নামানো হয়। এ ধরনের বস্তায় লাখ লাখ ইয়াবা বড়ি থাকার কথা। মোহাম্মদ মহসিন নামে হেলাল উদ্দিনের এক সহযোগী বস্তাটি নিজের বাসায় নিয়ে যান। এক দিন পর সেটি নেওয়া হয় ইকবাল আল ফারুক নামে অপর সহযোগীর বাসায়। ২৩ সেপ্টেম্বর শিকলবাহা ইউনিয়নের বাইট্টাগোষ্ঠীর কবরস্থান থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবাসহ কর্ণফুলী থানা পুলিশ ফারুককে গ্রেপ্তার করে। ২৯ সেপ্টেম্বর মহসিনকে কক্সবাজারে আটক করে র‌্যাব। কিন্তু মহসিন তথ্য গোপন করে কৌশলে র‌্যাবের হাত থেকে ছাড়া পান। গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশ কক্সবাজারের ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া থেকে মহসিনকে গ্রেপ্তার করে। তখন তিনি ট্রলারে করে ইয়াবার চালান আনা ও বিভিন্ন ডকে তা খালাসের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য আদালতে প্রকাশ করেন। তিনি জানান, মূলত টেকনাফ হ্নিলা এলাকার হেলাল উদ্দিনই ওই ইয়াবার মূল বিনিয়োগকারী ও আমদানিকারক। বস্তাভর্তি ইয়াবা আনা হলেও ১ লাখ ৩০ হাজারের বাইরে অবশিষ্ট বড়িগুলো কোথায় তা আজও জানা যায়নি। মহসিনকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেও বস্তাভর্তি ইয়াবার বিষয়টি নেই।

মহসিনের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, হেলাল তার সহযোগী ও শ্যালক ওবায়েদ বাদলকে নিয়ে একসময় মাছের ব্যবসা করত। পরে তারা দুজন ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়ে। গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকলেও গত সেপ্টেম্বরের আগে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসেনি।

স্থানীয় সূত্র বলছে, হেলাল বর্তমানে ওমানে পলাতক থাকলেও তার বিষয়-সম্পত্তি দেখাশোনা করে শ্যালক ওবায়েদ বাদল। সে সপরিবারে ইছানগরের ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকে। গত মঙ্গলবার ওই বাড়িটিতে গিয়ে বাদলকে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী স্মৃতি আক্তারের দাবি, ওবায়েদ বাদল কিছুদিন আগে ওমান চলে গেছে। তবে আশপাশের লোকজন বলছেন, বাদল এলাকায়ই আছে। গ্রেপ্তার এড়াতে সে কৌশলে চলাফেরা করে।