এ.এম হোবাইব সজীব,টেকনাফ থেকে ফিরে :
ইয়াবা কারবারীদের আত্মসম্পর্ণ অনুষ্টান দিনক্ষণ টিক হওয়ায় শেষ মুহুর্তে এসে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পন করতে দলে দলে প্রাণ ভয় আর ক্ষমা দুই তাগিতে টেকনাফ ছাড়ছেন বলে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে। আবার অনেকে বলছেন টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপের আতঙ্কে শীর্ষ ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পন করতে টেকনাফ ছাড়ছেন। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পন করতে পুলিশের হেফাজতে চলে গেছে বলে জানাগেছে। ফলে অনেকাংশ কমে আসতে পারে ইয়াবা ব্যবসা।
অপরদিকে মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে সরকারের দেওয়া সুযোগ নিয়ে দেড় শতাধিক ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করতে ‘প্রস্তুত’ বলে জানিয়েছে কক্সবাজার পুলিশ। তবে প্রথম থেকে ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে তাক লাগিয়ে দেন চ্যানেলে টুয়েন্টিফোরের আলোচিত সাংবাদিক আকরাম হোসাইন। সাংবাদিক আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থায় গত বছরের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে জলদস্যুদের ৫ টি বাহিনী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে আত্মসম্পর্ণ করেন। যা ইতিহাস ও বটে।
মহেশখালীর পর এবার টেকনাফের বদনাম গোছাতে এই প্রথম ইয়াবা কারবারিদের কাবু করেছেন বিচক্ষণ সাংবাদিক আকরাম হোসাইন। ইয়াবা কারবারীরা আত্মসম্পর্ণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মাণনার দাবি রাখে জাতির বিবেকখ্যাত সাংবাদিক আকরাম হোসাইন বলে সচেতন লোকজন বলছেন।
তাছাড়াও এই সীমান্ত জেলা নিয়ে মিয়ানমার থেকে আসে ইয়াবা ট্যাবলেট নামে মাদকটি। ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানও হবে এই জেলাটিতে।
চলতি মাসের ১৬ ফেব্রুয়ারী শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন।
শনিবার সকাল ১০টায় টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগের দিনই কক্সবাজারে পৌঁছাবেন।
এসপি মাসুদ বলেন, “এরই মধ্যে দেড় শতাধিক তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত ইয়াবা চোরাকারবারি আত্মসমর্পণের জন্য কক্সবাজারের বিশেষ একটি স্থানে নিজেদের উদ্যোগে নিরাপদ হেফাজতে জড়ো হয়েছেন। আরও অনেকে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।”
আত্মসমর্পণকারীরা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ পাবেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তবে ঠিক কতজন আত্মসমর্পণের জন্য ‘নিরাপদ হেফাজতে’ এসেছেন এবং কী কী শর্তে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে, ‘কৌশলগত কারণে’ তা প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন, “(ইয়াবা কারবারিরা) স্বাভাবিক জীবনে না এলে মামলা চলবে। আর স্বাভাবিক জীবনে এলে এদের মামলা আমরা দেখব।”
ইয়াবা পাচার করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া ব্যক্তিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের অবৈধ সম্পদ বৈধতা পাবে কি না- সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “সম্পদের বিষয়… এটা দুদক বা এনবিআর দেখবে।”
বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকের মধ্যে ইয়াবা ট্যাবলেটের কথাই সবার আগে আসে। এই ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। ইয়াবা পাচার বন্ধে মিয়ানমার সরকারের সহায়তা চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযানে এই রকম মৃত্যু ঘটেছে বহু এর মধ্যেই গত বছর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের প্রশ্নবিদ্ধ অভিযানে কয়েকশ জন নিহত হলেও ইয়াবা কারবার বন্ধ করা যায়নি।
এই অবস্থায় নতুন বছরের শুরুতে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়।
এর মধ্যে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল হক গত ১৫ জানুয়ারি ফেইসবুকে ঘোষণা দিয়ে প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণের কথা জানালে বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকে এনাম মেম্বারের প্রথম টিভির পর্দায় এসে আত্মসমর্পন করার ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
কক্সবাজারের চিহ্নিত মাদক পাচারকারীদের একটি অংশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের আগ্রহ জানালে বিষয়টি আকার পেতে শুরু করে।
এসপি মাসুদ হোসেন বলেন, বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল-২৪’র স্থানীয় সাংবাদিক আকরাম হোসাইনের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন ইয়াবা পাচারকারীদের একটা অংশ আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছে।
“এরই মধ্যে ইয়াবা চোরাকারবারিদের কাছে প্রস্তাব পাওয়ার পর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে লিখিতভাবে অবহিত করি।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসূচি তুলে ধরে এসপি মাসুদ বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে বিমানে কক্সবাজার পৌঁছাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওইদিন বিকালে কক্সবাজারে জেলার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরদিন সকালে তিনি টেকনাফে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যাবেন।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমনের সার্বিক প্রস্তুতির তদারকিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী আগামী বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আসছেন বলেও জানান এসপি।
এসপি মাসুদ জানান, গত বছরের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা সর্বশেষ তালিকায় ইয়াবা পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত ১ হাজার ১৫১ জন কক্সবাজারের। তাদের মধ্যে শীর্ষ ইয়াবা চোরাকারবারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৭৩ জনকে।
শীর্ষ ইয়াবা চোরাকারবারিসহ তালিকায় থাকাদের বড় একটা অংশের বসবাস সীমান্তবর্তী টেকনাফ উপজেলায়। তাদের সবাই কমবেশি প্রভাবশালী, কেউ কেউ আবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-