ইসলাম ডেস্ক : চারটি অক্ষরের সমন্বয় খুব ছোট একটি শব্দ ভালবাসা যাকে আরবী ভাষায় মুহাব্বত ও ইংরেজী ভাষায় Love বলে। যার অর্থ হচ্ছে, অনুভূতি, আকর্ষণ, হৃদয়ের টান; যা মানুষের অন্তরে আল্লাহপাক সৃষ্টিগতভাবে দিয়ে দেন। সাধারণত ভালবাসা দুই ধরনের (১) বৈধ ও পবিত্র (২) অবৈধ ও অপবিত্র । বিবাহের পূর্বে আধুনিক যুবক-যুবতীরা যে সম্পর্ক গড়ে তুলে তাকেই অবৈধ ও অপবিত্র ভালবাসা বলে। আর পবিত্র ভালবাসা বলতে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালবাসা, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালবাসা,স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসা ইত্যাদিকে বুঝায়। আল্লাহপাক আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা মাখলুক হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। অন্য কোন জীব জন্তুকে আমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেননি। এমনকি সর্ব শ্রেষ্ঠ আখেরী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত আমাদেরকে বানিয়েছেন। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত সর্ব প্রথম এই নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তাআলাকে ভালবাসা এবং আমাদের সর্বশেষ নবী ও হাবীবে রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ভালবাসা।
অনৈতিকতার সয়লাবের এই সময়ে সাধারণরা তো বটেই রক্ষনশীল পরিবারের মুসলিমরাও জড়িয়ে পড়ছে প্রেমঘটিত সমস্যায়। হতাশাগ্রস্থ অনেক মানুষেরই প্রশ্ন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কি? ছোট্ট পরিসরে এ বিষয়ে আলোকপাতের চেষ্টা করছি।
কুরআনে এসেছে— ‘তোমাদের প্রতি গুনাহ নেই যদি তোমরা কথার ইশারায় নারীদেরকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠাও কিংবা নিজেদের মনে গোপন রাখো। আল্লাহ অবগত আছেন….আল্লাহ ক্ষমাশীল ও ধৈর্য্যশীল।’ (সূরা আল বাকারা: ২৩৫)
‘আর সংরক্ষিত মেয়েরা তোমাদের জন্য হালাল, তারা ঈমানদারদের দল থেকে হোক বা আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে হোক। তবে শর্ত হচ্ছে তোমরা তাদের মোহরানা পরিশোধ করে দিয়ে বিয়ের মাধ্যমে তাদের রক্ষক হবে। তোমরা অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হতে পারবে না এবং লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেও পারবে না….’ (সূরা আল মায়িদা: ৫)
হাদীসের দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখা যায়— ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস’উদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে আমরা কতক যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছু ছিল না। এই হালতে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন। হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা, সাওম তার যৌনতাকে দমন করবে- (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৬৬)
এটি সহিহ হাদিস। এখান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, প্রাপ্ত বয়স্ক যুবকদের সামর্থ থাকলে বিয়ের জন্য উত্সাহিত করা হয়েছে। যদি কাউকে পছন্দ হয় তাহলে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। প্রেম করা একদমই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শেষ জমানা সমাগত দেখেই হয়তো ‘হারাম- প্রেম’ সহজ এবং ‘হালাল- বিয়ে’ কঠিন হয়ে গিয়েছে। আবার অনেকে এমন মনোভাবও পোষণ করেন যে প্রেম করবেন, সমাজকথিত প্রতিষ্ঠিত হয়ে সেটাকে বিয়ে করে হালাল করবেন। কিন্তু বিষয়টা কি এতই সহজ! একজন মানুষ কাউকে পছন্দ করল; হারাম সম্পর্ক করল; তারপর সেটাকে হালাল করার জন্য বিয়ে করল!
বিষয়টা যদি এতো সহজই হতো তাহলে আল্লাহ ‘হারাম’ শব্দটা ব্যবহারই করতেন না। ‘হারাম!’ শব্দটি অনেক ভারী! এরপর দেখি বিয়েতে সম্মতির বিষয়। হাদীসে এসেছে
‘আবূ সালামা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তাঁর অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রসূল! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে। তিনি বললেন, তার চুপ থাকাটাই তার অনুমতি। -সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫১৩৬।’
‘আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে নারীকে তার অভিভাবক বিবাহ দেয়নি তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল। স্বামী তার সাথে সহবাস করলে তাতে সে মাহরের অধিকারী হবে। তাদের মধ্যে মতবিরোধ হলে সে ক্ষেত্রে যার অভিভাবক নাই, শাসক তার অভিভাবক- জামে আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৮৭৯।’
তাহলে দেখা যাচ্ছে একটা বিয়েতে ছেলের পক্ষ থেকে শুধু ছেলের সম্মতিই যথেষ্ট। কিন্তু একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবক এবং মেয়ে উভয়ের সম্মতিই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রেক্ষিতে বলা যায় কাউকে পছন্দ হলে প্রথম কাজই হচ্ছে উভয়ের অভিভাবকদের জানিয়ে বিয়ে করে ফেলা। কিন্তু আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপট অভিভাবকরা বিষয়টা এতো সহজে মানতে চান না। তো এক্ষেত্রে অভিভাবকদের ইসলামের নীতি গুলো সুন্দর ভাবে বুঝাতে হবে। যদি এরপরও না মানে তাহলে তাদের সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হবে।
হাদীসে এসেছে— ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বাবার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি এবং বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ্ তা‘আলার অসন্তুষ্টি রয়েছে।- (৫১৫) জামে আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৮৯৯ ।’
‘আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কবীরাহ গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া- বুখারী, হাদিস নং ২৬৫৩।’
পিতামাতার অবাধ্য হওয়া যাবে না। তাদের সিদ্ধান্তকে পছন্দ না হলেও মেনে নিতে হবে। সর্বোপরি আল্লাহর কাছে অনেক অনেক বেশি দোয়া করতে হবে। আল্লাহ আমাদের শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে হেফাযত করুন। ইসলামের বিধানগুলো সঠিকভাবে জানার এবং মানার তৌফিক দিন। আমাদের ভুলত্রুটি গুলো মাফ করে ভালো কাজগুলো কবুল করুন। (আমিন)
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-