আলোচনায় ইয়াবা সম্রাট হাজি সাইফুল

ডেস্ক রিপোর্ট – হাজি সাইফুল করিম। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায় দেশের এক নম্বর ইয়াবা ব্যবসায়ী তিনি। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে হয়েছেন ব্যবসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি)। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বিস্তৃত তার ব্যবসা। কক্সবাজারের টেকনাফের বাসিন্দা হলেও থাকেন চট্টগ্রামে। ‘এস.কে. ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী তিনি। গার্মেন্টস, আমদানি-রপ্তানি, কার্গো ও জাহাজের ব্যবসা রয়েছে তার। চট্টগ্রাম শহরের কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারে রয়েছে তার একাধিক অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট। কক্সবাজারের কলাতলী পয়েন্টে হোটেলও নির্মাণ করছেন। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে সিআইপি শিল্পপতি সাইফুল এখন শত কোটি টাকার মালিক। অল্প সময়ের মধ্যে তার এই ফুলে-ফেঁপে ওঠা আলাদীনের চেরাগের নাম ইয়াবা।

পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় বিগত দীর্ঘ সময় ধরে বহাল তবিয়তে থাকা এ ইয়াবা ব্যবসায়ী এবার আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তার আত্মসমর্পণের বিষয়টি এখন সব মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারের মংডুর প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে দেশে সরাসরি ইয়াবার চালান নিয়ে আসা এবং চট্টগ্রামে নিয়ে পাচার করার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে সাইফুলের। তাকে আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারিও বলা হচ্ছে। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও টাকার দাপটে বরাবরই থেকে যাচ্ছেন আড়ালে। মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রভাবশালী সাইফুল কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়লেও বহাল তবিয়তেই ছিলেন। তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন চট্টগ্রামে কর্মরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ১৪১ শীর্ষ মাদক কারবারির তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দেয় ডিএনসি। এর বাইরে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ১১০ জন মাদক কারবারির তালিকা সংগ্রহ করেছে দুদক। সবগুলো তালিকায় শীর্ষে রয়েছে হাজী সাইফুলের নাম। ডিএনসির চট্টগ্রাম অঞ্চলের তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছে তার নাম। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শিলবনিয়াপাড়া গ্রামের ডা. হানিফের ছেলে এই সাইফুল।

গোয়েন্দা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে ইয়াবা কারবারে জড়িত সাইফুল। ছাত্রজীবনে ছাত্রদল করতেন। বিয়ে করেন টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহর বোনকে। সরকার বদল হলেও তার মাদক কারবার কখনো বাধাগ্রস্ত হয়নি। বরং বেড়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দলীয়ভাবে নিষ্ক্রিয় থেকে ভোল পাল্টে নেন সাইফুল। শুরুতে টেকনাফ ও কক্সবাজারে থেকে কারবার পরিচালনা করলেও ২০১১ সালের পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক ইয়াবার কারবার শুরু করেন সাইফুল।

সূত্রে জানা যায়, এসকে ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার পরিচয়ে সিআইপি খেতাব পান সাইফুল। এই পরিচয়ের আড়ালে তার মূল কারবার ইয়াবা। চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ির ভিআইপি টাওয়ারে রয়েছে তার একাধিক অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট। এর কোনো একটিতে তার বাস। রাজধানীতেও তার একাধিক ফ্ল্যাট আছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকায় লাখ লাখ ইয়াবার চালান পৌঁছে দেয় তার সহযোগীরা। বাসা বা হোটেলে বসে গোপন ফোন নম্বরে লেনদেন তদারকি করেন সাইফুল।