বদির ফুফাত ভাইয়ের ‘হুংকার’, জেল থেকে বের হয়ে তোদের দেখে নেব

ডেস্ক রিপোর্ট – আত্মসমর্পণ করতে এসেও অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহে আসা গণমাধ্যমকর্মীদের হুমকি দিয়েছেন আলোচিত সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির ফুফাত ভাই কামরুল হাসান রাসেল। গতকাল শনিবার শীর্ষ ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ আগে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় ছবি তুলতে গেলে সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দালালি অনেক করছিস, দালালি আর করিস না।

জেলথেকে বেরিয়ে তোদের (সাংবাদিক) দেখিয়ে দেব।’ এর আগেও গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে হুমকি দেন আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারিদের কয়েকজন।

অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত না থাকলেও আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন দু’বারের সাবেক সাংসদ বদি। ১০২ জন আত্মসমর্পণকারীর তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তার ১২ জন স্বজনের নাম রয়েছে। তারা হলেন  বদির ভাই আবদুস শুক্কুর, আমিনুর রহমান ওরফে আবদুল আমিন, শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, ফয়সাল রহমান; চাচাত ভাই মোহাম্মদ আলম; ফুফাত ভাই কামরুল হাসান রাসেল; খালাত ভাই মং অং থেইন ওরফে মমচি; ভাগ্নে সাহেদ রহমান নিপু ও শামসুল আলম শামীম এবং ভায়রা জামাল হোসেন, সৈয়দ হোসেন ও সাহেদ কামাল।

এ ছাড়াও রয়েছেন তার ভাই শুক্কুরের ব্যবস্থাপক মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু। বদির স্বজনদের আত্মসমর্পণকে স্বাগত জানিয়ে এলাকাবাসী বলেছে, সহজেই যেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া না হয়।

এদিকে আত্মসমর্পণ করতে হঠাৎ বিদেশ থেকে টেকনাফে ফিরেছেন সাত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি। তাদের মধ্যে বদির চার ভাই শুক্কুর, আমিন, শফিক ও ফয়সালও রয়েছেন।  বাকিরা হলেনÑ মোজাম্মেল হক, জোবায়ের হোসেন ও নুরুল আমিন। বিদেশ থেকে ফিরে তাদের আত্মসমর্পণ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বদির ভাই শুক্কুরের আত্মসমর্পণ নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত বছরের মে মাসে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর কারবারের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে দুবাই, মিয়ানমার এবং সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে পাড়ি জমান তারা।

স্থানীয়রা জানায়, টেকনাফে ইয়াবা কারবার শুরুর দিকের ‘গডফাদারদের’ একজন আবদুস শুক্কুর। বিপুল অর্থবিত্তের মালিক শুক্কুর দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। একপর্যায়ে গত বছরের শুরুর দিকে তিনি দুবাই পাড়ি জমান। ইয়াবা বিক্রির টাকায় সেখানে বাড়ি-গাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া শুরুর পর তিনি সরকারের ‘সবুজ সংকেতের’ অপেক্ষায় ছিলেন। মাত্র কয়েক দিন আগে দেশে ফেরেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৭৩ ইয়াবা কারবারির একজন শুক্কুর। গতকাল অন্যদের সঙ্গে তিনিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাত থেকে ফুল নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। 

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বদির ভাগ্নে সাহেদ রহমান নিপুর বাবা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত পরিদর্শক। তার নামও শীর্ষ মাদক কারবারির তালিকায় রয়েছে। এমনকি নিপুর মা শামসুন্নাহারের নামও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় উঠে আসে। বিপুল অর্থসম্পদের মালিক নিপু মাদকবিরোধী অভিযান জোরদারের পর পালিয়ে যান।  পলাতক জীবনের ইতি টেনে তিনিও আত্মসমর্পণকারীদের তালিকায় নাম লেখান।

বদির খালাত ভাই মং অং থেইন ওরফে মমচি টেকনাফের ইয়াবা জগতের আরেক গডফাদার। বিভিন্ন সংস্থার তালিকার প্রথম দিকে নাম থাকা মমচির পরিবারের সবাই সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে বসতি গড়েছে। নিরাপদে থাকতে বেশিরভাগ সময় সেখানেই তার দিন কাটে। বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাচারও করেছেন মিয়ানমারে।  দীর্ঘদিন পলাতক থেকে আত্মসমর্পণ করতে সম্প্রতি অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে আসেন মমচি।

/দেশ রুপান্তর