আবদুল আজিজ, বাংলা ট্রিবিউন
ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণে কক্সবাজারের (উখিয়া-টেকনাফ) সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুর রহমান বদি প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করলেও ওই অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রণ পাননি। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ না পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি একাধিক তদবির করেছেন বলেও এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। তবে এ বিষয়ে বদির কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জেলা পুলিশ বলছে, সাবেক এমপি হিসেবে নিয়ম ছিল না বলেই তিনি এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি।
ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের আগে ব্যাপক আলোচনা ছিলো বদিকে নিয়ে। কারণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সবকয়টি তালিকায় ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে বদি ও ইয়াবা গডফাদার হিসেবে তার ভাই-বোনসহ নিকটাত্মীয় অনেকের নাম উঠে আসে। আত্মসমর্পণ করতে আসা ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে বদিও আত্মসমর্পণ করছেন– গত এক সপ্তাহ ধরে এমন আলোচনা চলছিল তাকে নিয়ে। শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যাপক আলোচিত হওয়া সত্ত্বেও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বদি ছিলেন অনুপস্থিত।
টেকনাফের একাধিক সূত্র জানায়, বদি জেলা পুলিশ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতার কাছে তদবির করেছিলেন আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাওয়ার জন্য। কিন্তু সফল হননি। এ নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা চলছে। তবে কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘এটা কি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল যে, তাকে আমন্ত্রণ করতে হবে? এ বিষয়টি আমার হাতে ছিল না। এটি আমাদের এসপি স্যার জানেন।’
যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদিকে আমন্ত্রণ করার মতো আমাদের কাছে কোনও রুল ছিল না। দলের কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদেও তিনি নেই। এছাড়া তিনি তো এখন সাবেক। তার স্ত্রী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আকতারকে তো আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘আবদুর রহমান বদি কেন আমন্ত্রণ পাননি আমি জানি না। হয়তো অনুষ্ঠানটি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে মনে করে জেলা পুলিশ এটা করেছে।’ তবে কী কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে মনে করছেন তিনি সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
এ ব্যাপারে উখিয়া ও টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও রিসিভ না করায় কোনও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। একইভাবে বদির স্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আকতারও মোবাইল রিসিভ করেননি। বদির সহকারী হেলাল উদ্দিনও আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানেন বলে জানিয়েছেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মাইকিং করে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম দেন বদি। অন্যথায় কারও দায় নিতে পারবেন না বলেও জানান। সাবেক এই সংসদ সদস্যের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার নিকটাত্মীয়সহ অনেকেই আত্মসমর্পণের জন্য প্রায় একমাস আগে পুলিশি হেফাজতে চলে যান। এসব কারণে বহুল আলোচিত এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বদির অবস্থান কী হবে? অনুষ্ঠান মঞ্চে তিনি থাকবেন কিনা? এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। অবশেষে ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলে ওই অনুষ্ঠানে বদির দেখা মেলেনি।
শনিবার টেকনাফে আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা কারবারির মধ্যে সাবেক এমপি বদির ৪ ভাইসহ ১৪ নিকটাত্মীয় ছিলেন। তারা হলেন– বদির চার ভাই আবদুল শুক্কুর (৩৩), আমিনুর রহমান ওরফে আবদুল আমিন (৪১), শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক (২৯) ও ফয়সাল রহমান (২৯)। বদির ভাগ্নে শাহেদ রহমান নিপু (৩৩), শামসুল আলম শামিম (২৮), ফুফাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল (৩৫), নুরুল আলম (২৫) খালাতো ভাই মং অং থৈন (৪৮), বেয়াই সৈয়দ হোসেন (৩৫), তার ভাই জামাল হোসেন (৩০), শাহেদ কামাল (৩৫) ও মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে দানু (৩৪) পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
এদিকে আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা কারবারিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (টেকনাফ) বিচারক দেলোয়ার হোসেন এ আদেশ দেন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা কারবারি ৩ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা ও ৩০টি দেশীয় পিস্তল জমা দেয়। পরে তিনটি বাসে করে তাদের কক্সবাজার কারাগারে পাঠানো হয়।
/বাংলা ট্রিবিউন
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-