কক্সবাজারে আরও ৫০০ ইয়াবা কারবারি শনাক্ত: রয়েছে অনেক প্রভাবশালীও

আবু তাহের, কক্সবাজার

কক্সবাজারে আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারি ও গডফাদারদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ইয়াবা সিন্ডিকেটের অনেক অজানা তথ্য। নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৫ শতাধিক ইয়াবা কারবারি। এর আগে সরকারের কোনো তালিকায় ছিল না তাদের নাম। এই কারবারিরা এতদিন ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। ইয়াবা ব্যবসা করে তারা বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে।

শনিবার টেকনাফে আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা কারবারির দেওয়া স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে এসব অজানা তথ্য। নতুন কারবারিদের নাম-পরিচয় পুলিশের হাতে আসার পর তাদের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্যমতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজার জেলায় এক হাজার ১৫১ জন ইয়াবা কারবারি রয়েছে। তাদের বেশিরভাগ সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারিদের কাছ থেকে অনেক গোপন তথ্য পাওয়া গেছে। ৫ শতাধিক নতুন ইয়াবা কারবারিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেক প্রভাবশালী ও বিত্তশালী ব্যক্তি রয়েছে। তাদের বিষয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

তিনি জানান, ইয়াবার অর্থ লেনদেনে জড়িত বেশ কিছু হুন্ডি ব্যবসায়ীর তথ্য পুলিশের কাছে এসেছে। তাদের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ইয়াবা কারবারিদের কাছ থেকে নিয়মিত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণকারী কিছু লোকের বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে। এসপি জানান, পুলিশের হাতে যে তথ্য-প্রমাণ এসেছে, এতে ইয়াবা কারবারিদের ধরা এখন অনেক সহজ হবে। এখনও যারা আত্মসমর্পণ করেনি, তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের সম্পদের তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। তাদের অবৈধ  সম্পদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দুদক, এনবিআরসহ বিভিন্ন সংস্থাকে দেওয়া হবে। তাদের অবৈধ সম্পদের ব্যাপারেও তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, পুলিশ মাদকের ব্যাপারে কোনো আপস করবে না। কঠোর হাতে এদের দমন করা হবে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, টেকনাফে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ৫৭ জন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি। তারা ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এসব ইয়াবা সিন্ডিকেটের গডফাদারদের আত্মসমর্পণে ইয়াবা সাম্রাজ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

টেকনাফ সীমান্ত এলাকার লোকজনের মতে, চলমান কঠোর অভিযানে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইয়াবা কারবারিদের নেটওয়ার্ক। তবে অনেকে আত্মসমর্পণ না করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছে। আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, আত্মসমর্পণকারী মাদক ব্যবসায়ী গডফাদাররা সহজে ছাড়া পাচ্ছে না। তবে তাদের অনেকে ইতিমধ্যে আদালত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা-তদবির শুরু করেছে। আদালত সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন কারবারির মধ্যে ১২ জন গত মঙ্গলবার ও বুধবার জামিন চেয়েছে। তবে সংশ্নিষ্ট আদালতের বিচারক তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন।

কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলম জানান, আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন আসামির কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে রিমান্ড চাওয়া হবে।

গত বছরের ৪ মে থেকে ইয়াবার বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু হলে কক্সবাজারে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৪৪ কারবারি। এর মধ্যে ৩৭ জনই সীমান্ত এলাকা টেকনাফের। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৭৩ জন গডফাদারের মধ্যে মাত্র চারজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। অন্যরা সবাই আত্মগোপনে রয়েছে।