মুহিবুল্লাহ মুহিব,বার্তা ২৪
চলতি পর্যটন মৌসুমে অন্তত ৫ লাখের বেশি পর্যটক অবস্থান করছে কক্সবাজারে। বেশির ভাগ পর্যটকের অন্যতম আকর্ষণ ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিনড্রাইভ সড়ক।
সড়কটির এক পাশে পাহাড় ও অন্যপাশে সমুদ্র এ দেখেই মুগ্ধ হয় দেশি-বিদেশি পর্যটক। কিন্তু মেরিনড্রাইভে প্রবেশের সংযোগ সড়ক সংস্কার কাজে ধীরগতি ও সঠিক বিকল্প সড়ক না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়ছে ভ্রমণকারীরা।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে খানা-খন্দে পড়ে থাকা শহরের কলাতলী মোড় থেকে বেইলি হ্যাচারি পর্যন্ত সংযোগ সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কক্সবাজার পৌরসভা।
প্রায় দেড় কিলোমিটার (১৩০০ মিটার) সড়কের সংস্কার কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। মাত্র ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক নিয়োগ করেই চলছে কাজ। পৌরসভার পক্ষ থেকে ৩ মাসের সময় বেধে দেয়া হলেও সংস্কার কাজ সঠিক সময়ে শেষ হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় কিলোমিটার (১৩০০ মিটার) সড়কের সংস্কার কাজের জন্য প্রায় ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। নিয়োগ করা হয়েছে দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
মেরিনড্রাইভ ভ্রমণ করে আসছিলেন টাঙ্গাইল থেকে আসা শর্মিলা দে। তিনি বলেন, ‘যাওয়ার সময়ও গাড়ি আটকেছে, যাওয়ার সময়ও আটকা পড়ছে। তাই দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আমাদের বাস ছেড়ে দিবে। গাড়ি ধরতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।’
ঢাকা থেকে আসা শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘সামান্য এক থেকে দেড় কিলোমিটার সড়কের জন্য পুরো মেরিনড্রাইভের দুর্নাম হচ্ছে। এত বড় সড়ক নির্মাণ করতে পারলে মাত্র কয়েক কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে এত ভোগান্তি মেনে নেয়া যায়না। একটি সঠিক বিকল্প সড়ক করার পর কাজ শুরু করা উচিৎ ছিল।’
স্থানীয় সলিম উল্লাহ বলেন, ‘অল্প শ্রমিক নিয়ে কাজ চলতে থাকলে আগামী ৬ মাসেও কাজ সম্পন্ন হবে বলে মনে হয়না। কর্তৃপক্ষের চরম বোকামিতে বিকল্প সড়ক না করে সংস্কার কাজ শুরু করায় প্রতিদিন শতশত গাড়ি আটকা পড়ছে। নানা দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। চাপ সইতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের ও পর্যটকদের।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘সমুদ্র সৈকত দিয়ে কখনো বিকল্প সড়ক হয়না। সৈকত দিয়ে গাড়ি চলাচলের কারণে জলজপ্রাণী চরম ক্ষতিরমুখে পড়ছে। এটা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতি। জোয়োরের পানিতে গাড়ি আটকা পড়ছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটকদের।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই সড়কের সংস্কার কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন। আমার আওতাভুক্ত ২০০ মিটার কাজ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। কাজ দ্রুত শেষ করতে আজকে প্রায় ৪০ জন শ্রমিক নিয়োগ করা হবে বলে দাবি করেন তিনি।’
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান মুঠোফোনে জানান, ‘অধিক যানচলাচল ও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পর্যটন নগরীর অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বেহাল দশা। ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। তাই সড়কটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাজ দ্রুতভাবে শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
কাজ চলাকালীন এই সড়কের বিকল্প হিসেবে লিংকরোড হয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়কটি ব্যবহারের অনুরোধ, সেই সাথে নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন মেয়র মুজিবুর রহমান।
উল্লেখ্য যে, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ধরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠা ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালের ৬ মে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তবে ১৯৯১-৯২ সালে সড়ক প্রকল্পটি গ্রহণের পর তখন থেকেই নির্মাণ কাজ শুরু হয় মেরিন ড্রাইভের।
কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে বেইলি হ্যাচারি মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৩শ মিটার সড়ক বিগত ২০০০ সালে সামুদ্রিক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে সড়ক যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৫-০৬ সালে কলাতলী গ্রামের সংকীর্ণ সড়কটিকে সামান্য প্রশস্ত করে মেরিন ড্রাইভের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-