চট্টগ্রাম – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার নওফেলের বক্তব্য শুনে কেঁদেছিলেন, আজ রোববার চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল ও এলিভেটেড এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন উপলক্ষে সমাবেশে প্রধান মন্ত্রীর বক্তব্য শুনে কাঁদলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল।
শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ১৯৫০ সালে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার এক গোপন প্রতিবেদন নিজ বক্তব্যে পড়ে শুনাচ্ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। প্রতিবেদনে পাকিস্তানের তৎকালিন গোয়েন্দা সংস্থা উল্লেখ করেছিলো ‘ভাষা সৈনিক শেখ মুজিব শর্ত সাপেক্ষ জেল থেকে মুক্ত হওয়ার চেয়ে নিজের মৃত্যুবরণকে বেশী পছন্দ করেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল যখন বক্তব্যটি রাখছিলেন তখন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায়। এসময় প্রধানমন্ত্রী চশমা খুলে কয়েকবার নিজের চোখও মুছেন। ব্যারিস্টার নওফেল তার বক্তব্য শেষ করার পরে প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার নওফেলকে ডেকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে এসময় কিছুক্ষন কথা বলতেও দেখা যায়।
এদিকে, আজ রোববার(২৪ ফেব্রুয়ারী) চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল ও বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মান কাজ উদ্বোধন শেষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্যের শুরুর দিকে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী, তিনি চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন। নদীর ওপর ব্রিজ করলে নদীর ক্ষতি হবে। তাই গণমানুষের এই নেতা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনও করেছিলেন। আজ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে। তিনি থাকলে অত্যন্ত আনন্দিত হতেন। বাংলাদেশের অনেক আন্দোলন সংগ্রামে তার অবদান রয়েছে। আজ আমি তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তখন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে চোখ মুছতে দেখা যায়। এসময় টিভির ক্যামরায় ধরা পড়ে এ দৃশ্য।
উল্লেখ্য, গতকাল শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তার বক্তব্যে বলেন, ভাষা আন্দোলনের প্রথম ভাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হয়।
‘সিক্রেট ডক্যুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’
বইটির ৪৫১ পৃষ্টায় বর্নিত আছে উল্লেখ করে তিনি এসময় বলেন, জেলে থাকাকালীন সময়ে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শর্ত স্বাপেক্ষে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে আলোচনা করার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কারাগারে পাঠান। আলোচনা শেষে ইন্টেলিজেন্ট অফিসার জনৈক মুন্সি হোসেন উদ্দিন নিজ হাতে ১৬ জুন ১৯৫০ সালে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এসময় সেই প্রতিবেদনটি ব্যারিষ্টার নওফেল ইংরেজীতে পড়ে শুনান।
(পাঠকদের জন্য বাংলায় অনুবাদ)
‘’আদেশ অনুসারে ১৫জুন বিকাল ৫:৩০ মিনিটে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে নিরাপত্তায় বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ জিজ্ঞাসাবাদের সময় শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং দেশ ভাগের পূর্বে তিনি একজন মুসলিম লীগার ছিলেন। তিনি ১৯৪৭ সালে মুসলিম লীগেরে অধীনে বিহারে রিলিফ কাজও করেন। পূর্ব পাকিস্তানে কোন সামরিক একাডেমি এবং শিল্প কারখানা স্থাপন না করায় তিনি পাকিস্তান সরকারের সমালোচনা করেন। শেখ মুজিবুর রহমান আরো বলেন, যদিও পূর্ব বাংলা পাকিস্থানের মোট ট্যাক্সের (কর) তিন- চতুর্থাংশ দিয়ে থাকে তবুও পূর্ব বাংলায় শিক্ষাকে অবহেলা করা হচ্ছে৷ তিনি শর্ত সাপেক্ষ মুক্তি পাওয়ার চেয়ে জেলে থেকে মৃত্যুবরণ করাকে পছন্দ করেন। উপরোক্ত বক্তব্য থেকে বলা যায়, তিনি চাপে পড়ে তার রাজনৈতিক আদর্শ ও মনোভাবের কোন পরিবর্তন ঘটান নি”
বক্তব্যটি পড়ে শুনানোর পর ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন এই দালিলিক প্রতিবেদনে একটা বিষয়ে উঠে এসেছে। ভাষা সংগ্রামের সূচনালগ্নে এই আন্দোলন করার অপরাধে গ্রেফতার হওয়া ‘ভাষা সৈনিক’ শেখ মুজিবুর রহমান শর্ত স্বাপেক্ষে মুক্তির চাইতে তার রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য মৃত্যুবরনেও প্রস্তুত ছিলেন।
উল্লেখ্য ভাষা আন্দোলনের জন্য বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ।পরে মুক্তি পেয়ে ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দর্পভরে যখন বললেন, ‘একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ তখন বঙ্গবন্ধু সবার আগে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে বলেন ‘না বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে।’ একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে তিনি আবারো কারারুদ্ধ হন। ১৯৪৯ সালে দুইবার একই অভিযোগে গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়েছিলেন। সর্বশেষ ভাষা আন্দোলন সারাদেশের ছড়িয়ে দেওয়ার অপরাধে ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ দুই বছর এক মাস সাতাশ দিন কারাবন্দী ছিলেন। উল্লেখিত প্রতিবেদনটি সেই দীর্ঘ ২ বছর কারাগারে থাকাকালীন সময়ের।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-