বিশেষ প্রতিবেদক :
কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলাতেই যোগ্যদের মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মনোনয়নে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে সংগঠনের ত্যাগী নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। পারিবারিক রাজনীতিও যুক্ত হয়েছিল মনোনয়নের মাপকাঠিতে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাদের মনোনয়ন দিয়েছেন।
সচেতন মহলের মতে জেলার অন্য উপজেলাগুলোর তুলনায় উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশব্যাপী ইয়াবা বিস্তারের রুট হিসেবে পরিচিত উপজেলা দুটিতেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে দু’জন শিক্ষাবিদকে। রাজনৈতিকভাবেও যাঁরা অত্যন্ত অভিজ্ঞ। তাঁদের বিরুদ্ধে ইয়াবার সাথে সংশ্লিষ্ঠতারও অভিযোগ নেই।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোঃ আলী ইতিঃপূর্বে একবার সংসদ-সদস্য ছিলেন। রাজনীতিতে অত্যন্ত ক্লিন ইমেজে রয়েছে তাঁর। তিনবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেন। তিনবার হ্নীলা ইউপি’র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দীর্ঘ সময় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও ইয়াবাসহ যে কোন ধরনের কালোবাজারিতে তাঁর সংশ্লিষ্টতা ছিলো না।
অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীও দীর্ঘসময় ধরে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতি নির্বাচিত হন। রাজনীতিবিদের পাশাপাশি একজন শিক্ষাবিদ হিসেবেও তিনি উখিয়া উপজেলায় অত্যন্ত পরিচিত। দীর্ঘদিন রাজনীতি করলেও মাদক পাচার কিংবা মাদক কারবারিদের মদদ দেয়ার অভিযোগ নেই তাঁর বিরুদ্ধে। সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মাঝেও তিনি জনপ্রিয়। এ কারণে তাঁর মনোনয়ন প্রাপ্তিতে উখিয়ার দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ অত্যন্ত খুশি।
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘসময় ধরে আওয়ামী লীগ করছেন। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের সাথে মুখোমুখি হওয়ায় বিএনপি আমলে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এই জননেতা কয়েকবার ফাঁসিয়াখালী ইউপি’র চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। সংগঠনের জন্য নিজের সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এ কারণে দলের সবাই মিলে উনাকে প্রার্থী করতে বললে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকেই চকরিয়া উপজেলায় মনোনয়ন দিয়েছেন।
পেকুয়া উপজেলাতে মনোনয়ন পাওয়া আবুল কাশেমের রাজনীতির ইতিহাস অত্যন্ত করুণ। শুধু নিজে নন। তাঁর রাজনীতি করার অপরাধে পরিবারের সব সদস্যকেই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদের ইউনিয়নের বাসিন্দা হওয়ায় বিএনপি আমল এলেই তাঁর জন্য অমানিশা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে দলীয় নেতা-কর্মীদের দাবি ছিলো অন্তত নিজ দল সরকারে থাকা অবস্থায় তাঁকে মূল্যায়িত করা হোক। শেষ মুহূর্তে এসে দলীয় মনোনয়ন লাভ করায় তাই নেতা-কর্মীরা বেশ উচ্ছ্বসিত।
কুতুবদিয়ায় মনোনয়ন পাওয়া ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে তিনিই একমাত্র জেলার রাজনীতিতে সক্রিয়। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ইতিপূর্বে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া ছাড়াও একাধিকবার বড়ঘোপ ইউপি’র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ কারণে তাঁর মনোনয়ন কোন বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারেনি।
কুতুবদিয়ার মতো মহেশখালীতেও একজন ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। মনোনয়নপ্রাপ্ত মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম মহেশখালীতে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। মহান মুক্তিযুদ্ধে জেলার প্রথম শহীদ মোহাম্মদ শরীফ চেয়ারম্যানের জ্যেষ্ঠ পুত্র তিনি। ইতিপূর্বে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। শহীদ পরিবারের সন্তান হওয়া ছাড়াও কোন বিতর্কে কখনো জড়িত ছিলেন না তিনি। এমন ভদ্র, আদর্শবান একজন মানুষকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় মহেশখালীতে আওয়ামী লীগ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলায় মনোনয়নপ্রাপ্ত কায়সারুল হক জুয়েল কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা একেএম মোজাম্মেল হক’র কনিষ্ঠ পুত্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এই নেতার কারণেই তাঁর প্রিয়পুত্রকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কায়সারুল হক জুয়েল বর্তমানে কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
জুয়েলের জেঠাতো ভাই মুজিবুর রহমান বর্তমানে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র। জুয়েলের বড় ভাই মাসেদুল হক রাশেদ কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মেঝ ভাই শহিদুল হক সোহেল কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। সেজ ভাই শাহিনুল হক মার্শালও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। একমাত্র বোন তাহমিনা হক লুনা কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য।
রামু উপজেলায় মনোনয়নপ্রাপ্ত রিয়াজ উল আলম উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান এবং উপজেলা যুবলীগের বর্তমান সভাপতি। সংগঠনের একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে সকলের প্রিয়পাত্র তিনি। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সুখে-দুঃখে তাকে কাছে পেয়েছেন। হাতে গোনা কয়েকজনের অপছন্দের হলেও সংসদ-সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল থেকে শুরু করে সবার পছন্দের তালিকায় ছিলেন তিনি। ফলে তার মনোনয়ন প্রাপ্তিতে সংগঠনের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা উপকৃত হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-