আজিম নিহাদ :
নানা নাটকীয়তা শেষে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে প্রার্থীর সংখ্যা। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ মুহুর্তে এসে জমা দেননি বিএনপি-জামায়াতের দুই নেতা। এরফলে ভোটের মাঠে নৌকার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে আছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী তথা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার সদর উপজেলায় ও ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। ইভিএম পদ্ধতিতে কারচুপি বা প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কম। একারণে প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এরফলে এই উপজেলায় জমজমাট নির্বাচন হবে বলে আশা সচেতন ভোটারদের।
এদিকে জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, অন্যান্য নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে কেন্দ্র থেকে কড়া বার্তা থাকলেও এবার সেই ধরণের নির্দেশনা বা বাধ্যবাধকতা নেই। বরং দলের কেউ চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে বলে কেন্দ্র থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়। একারণে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বাইরে দলীয় নেতাদের বিদ্রোহী তথা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক পড়েছে।
জানা গেছে, সদর উপজেলা নির্বাচনের প্রথম তফশিল অনুযায়ী ২৬ ফেব্রুয়ারী ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়। কিন্তু নানা কারণে কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারায় কমিশনে অভিযোগ করেন। পরে ২৭ ফেব্রুয়ারী আবারও নতুন করে তফশিল ঘোষণা করা হয়। পুন:তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৪ মার্চ পর্যন্ত। যাচাই বাছাই হবে ৬ মার্চ। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ৭ থেকে ১৩ মার্চ।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবারের তফশিল অনুযায়ী গত ২৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন মাত্র ৩ জন প্রার্থী। কিন্তু দ্বিতীয় তফশিল ঘোষণা করার পর চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের মনোনয়ন সংগ্রহ বেড়ে গেছে। মাত্র তিন জন থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী দাঁড়ায় ১২ জনে। পরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে সোমবার (৪ মার্চ) চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯ জন প্রার্থী। এরা হলেন- নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল, লাঙল প্রতীকের জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির নেতা আতিকুল ইসলাম, পরিবহন শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ সেলিম আকবর, আওয়ামী লীগ নেতা ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয়, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল জাহান চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ আল মোর্শেদ।
বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত জমা দেননি। আর জামায়াত নেতা ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম ওরফে ভিপি বাহাদুর নির্দিষ্ট সময়ে জমা না দেওয়ায় তার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেনি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এবিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা জানান, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল আজ (সোমবার) বিকাল ৫টা পর্যন্ত। কিন্তু শহিদুল আলম জমা দিতে আসেন ৫টা ১৫ মিনিটে। নির্দিষ্ট সময়ে না আসায় মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।’
নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী কায়সারুল হক জুয়েল ভোটের মাঠে একেবারে নতুন। তবে পারিবারিক পরিচিতি ভোটে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা তার ঘনিষ্টজনদের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যে পাঁচজন হেভিওয়েট নেতা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে তিনজন হলেন নির্বাচনের রাজনীতিতে একেবারে পোক্ত।
জেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আবছার কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের চার চার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। সদর উপজেলা নির্বাচনেও একবার অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিজয়ী হননি। তবে এবার তাকে ঘিরে বিজয়ের স্বপ্ন দেখছে তার সমর্থকরা।
বর্তমান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব এক সময় জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ছিলেন। গতবারের উপজেলা নির্বাচনে সদর উপজেলায় নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। তার সমর্থকরা দাবী করেন, নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে বিজয়ের মুখ দেখেননি তিনি। কিন্তু বৃহত্তর ঈদগাঁও’র প্রার্থী হিসেবে এবার বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তার সমর্থকেরা।
সোহেল জাহান চৌধুরী বর্তমানে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান। তিনি ঈদগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। সমর্থকদের দাবী একটি নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক রয়েছে তার। যেটি নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে সহায়ক হবে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে ভোটারদের বিশাল একটি অংশ তার পক্ষে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে টিকে থাকলে জয়ের ‘আশা’ দেখছে তার সমর্থকরা। একইভাবে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিমও ভোটের লড়াইয়ে ভাল অবস্থানে থাকবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
দলের পাঁচজন হেভিওয়েট প্রার্থীকে ডিঙিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে বিজয় ছিনিয়ে আনা কঠিন বলে মন্তব্য রাজনৈতিক বোদ্ধাদের। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতার দাবী, নেতাকর্মীরা সব সময় দলীয় প্রতীকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে। ভোটারদের কাছে দলীয় প্রার্থী জুয়েলের গ্রহণযোগ্যতা নতুন হিসেবে অন্যান্যদের চেয়ে অনেক বেশি। তাই নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত বলে আশাবাদী তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কায়সারুল হক জুয়েলকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দিয়েছেন। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অর্থ হচ্ছে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করা। তাই সময় থাকতে দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান নৌকার প্রার্থীর সমর্থক নেতাকর্মীরা।
এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দিয়েছেন ১০ জন। এরা হলেন- জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী কাজী রাসেল আহমেদ, ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা রশিদ মিয়া, শ্রমিক লীগ নেতা আমজাদ হোসেন ছোটন, কায়ুম উদ্দিন, বাবুল কান্তি দে, হাসান মুরাদ, কামাল উদ্দিন, মিজানুর রহমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোর্শেদ হোসাইন তানিম।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনজন প্রার্থী। এরা হলেন- বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হেলেনাজ তাহেরা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদা তাহের ও জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আয়েশা সিরাজ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-