ইটভাটায় হাত-পা বেধে ৫ দিন ধরে শ্রমিকের উপর বর্বর নির্যাতন

শাহীন মাহমুদ রাসেল :

কক্সবাজারের রামু উপজেলায় এক শ্রমিককে ইটভাটায় পাঁচ দিন আটকিয়ে হাত-পা বে‍ঁধে শরীরে বিভিন্ন স্থানে বর্বর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠেছে ইটভাটার মাঝির বিরুদ্ধে। আগুনের ছেঁকা দিয়ে জ্বলসে দেয়া হয় শ্রমিকের শরীরের বিভিন্ন অংশ।

ইটভাটা থেকে পালিয়ে প্রানে রক্ষা পেলেও শ্রমিকটি মৃত্যুর যন্ত্রনা কাতরাচ্ছে হাসপাতালের শয্যায়। শুক্রবার কক্সবাজার জেলার সদর হাসপাতালে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। এলাকাবাসী ও নির্যাতিত শ্রমিকের স্ত্রী ও স্বজনরা জানায়, সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খামার পাড়া গ্রামের মৃত ছিদ্দিক আহাম্মদের হত দরিদ্র ছেলে ইমাম হোসেন (৪৫) বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলো।

গত কয়েকবছর পূর্বে ইমাম রামু উপজেলার তেচ্ছিপুল এলাকার এইচবিএম ইটভাটার মাঝি শ্রমিকের কাজ করার জন্য নিয়ে যায় একই উপজেলার তেচ্ছিপুল এলাকার ফারিকুল গ্রামের মৃত ফজল করিমের ছেলে খাইরুল আমিন মাঝি। এরপর থেকে ইমাম নিয়মিত কাজ করে আসছে ওই ইটভাটায়। প্রতিদিনের মতো গতবছর একদিন কাজ শেষ করে কাহিল হয় ইমাম। এ সময় ইটভাটার মাঝি খাইরুল শ্রমিক ইমামকে অতিরিক্ত কাজ করার জন্য তাকে চাপ দেয়।

ইমাম ভারী কাজের কারণে শারিরীকভাবে কাহিল হয়ে যায়। এতে বাড়তি কাজ করতে অপারগতা জানায় খাইরুল মাঝিকে। পরে সে ইটভাটা ত্যাগ করে চলে আসে এবং অন্য জায়গায় কাজ শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খাইরুল মাঝি, তার সহযোগী লোকজন একত্রিত হয়ে গত রবিবার ইমামকে ধরে নিয়ে যায় এবং বেদড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে ইমামের হাত-পা বেধে তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালায় তারা।

এ ছাড়া কোমরে লোহার চেইন বেঁধে ইটভাটার পাশে ছোট্ট একটি ঘরে পাঁচদিন ধরে আটকিয়ে রেখে আগুনের ছেঁকা দিয়ে পুরো শরীরে ঝলসে দেয়া হয় বলে জানান শ্রমিক ইমাম। পরে গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) সকালে অন্য লোকজনের সহযোগিতায় ইটভাটা থেকে পালিয়ে খরুলিয়া খামার পাড়া গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। এর পর থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় পরিবারের লোকজন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের শয্যায় বর্তমানে মৃত্যুর যন্ত্রনা কাতরাচ্ছেন শ্রমিক ইমাম। এ ঘটনার সাথে জড়িত খাইরুল মাঝি, তার সহযোগীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন নির্যাতিত ইমামের পরিবার ও এলাকাবাসী।

এদিকে মাঝি খাইরুল মুঠোফোনে বর্বর নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে জানায়, সে কাজের কথা বলে গতবছর আমার কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে কাজে না আসায় তাকে ধরে নিয়ে আসি।

এ দিকে শ্রমিক ইমামের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, শ্রমিক ইমামের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও আগুনের ছেঁকার চিহৃ রয়েছে। স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে। তার চিকিৎসা অব্যাহতভাবে চলছে। কিন্তু ইমাম হোসেন ডপূর্বের ন্যায় শরীর ফিরে পাবেনা। তবে শ্রমিকের পরিবার বর্তমানে আতংকে রয়েছে, মাঝি ও তার সহযোগীদের নির্যাতনের ভয়ে। এ ব্যাপারে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল মনছুর বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।