প্রথম দিকে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে উখিয়া টেকনাফের স্থানীয় জনগণ রোহিঙ্গাদের বরণ করে নিলেও কিছুদিন যেতেই সে উৎসাহে ভাটা পরতে শুরু করে তাদের। এখন তা গিয়ে ঠেকেছে তিক্ততায়। উখিয়া টেকনাফে রাস্তার ডান পাশে মোট ৩১ টি ক্যাম্পে ১২ লাখ শরণার্থী বসবাস করছে। এই ক্যাম্পের জায়গাগুলোতে আগে থেকে বসবাস করা বাঙ্গালী, যারা হোস্ট কমিউনিটি হিসেবে পরিচিত তারা প্রতিনিয়তই বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রোহিঙ্গাদের দ্বারা।
প্রচুর পরিমানে রোহিঙ্গাদের জায়গা দিতে গিয়ে হোস্ট কমিউনিটির লোকজন চাষাবাদের জমি হারিয়েছে অনেক। এমনকি বাড়ির উঠানের মালিকানাও ধরে রাখতে পারছেনা তারা। ক্যাম্পের ভেতরে বসবাস করা এই হোস্ট কমিউনিটির মানুষরা তাদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর তৈরি করলেও রাতে এসে তা ভেঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে কে না কে!
এসবের কোন সুরাহা পাচ্ছেননা জানিয়ে উখিয়া ময়নার ঘোনা ১১ নাম্বার ক্যাম্পের এক স্থানীয় বাঙ্গালী সিভয়েসকে বলেন, বিপদগ্রস্থ রোহিঙ্গাদের মায়া দেখাতে গিয়ে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে এনেছি। এক সময় আমরা যেসব জায়গায় চাষাবাদ করতাম সেসব জায়গা হারিয়েছি। বাঁচা দায় হয়ে গেছে আমাদের। আমাদের শিশুরা খেলাধুলা পর্যন্ত করতে পারেনা। কোথাও আমাদের বাচ্চারা খেলাধুলা করতে গেলে রোহিঙ্গা বাচ্চারা দল বেধে এসে তাদের ধাওয়া দেয়। এটা করে তারা মজা পায়। প্রতিবাদ করবো সেই উপায়ও নাই। আমাদের কথা কেউ ভাবছেনা। পাশাপাশি অনেকে অভিযোগ করেন স্থানীয় পরিবারগুলোর মেয়েরা প্রায়ই রোহিঙ্গা যুবকদের দ্বারা উত্যক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
দিনে এসব ঘটনা ঘটছে মোটামুটি সবার সামনেই। কিন্তু বিকেল পাঁচটায় এনজিও সহ সব ধরনের সংস্থার লোকজন ক্যাম্প ত্যাগ করতে শুরু করলে আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করে ক্যাম্পের পরিবেশ। রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ নেয়।
রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টহল থাকলেও তাদের চোখ ফাকি দিয়ে প্রায়ই ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক লোক জড় হয়ে মিটিং করছে বলেও জানান স্থানীয়রা।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পে আরকান ভিত্তিক বিভিন্ন জঙ্গি ও সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামান ও তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ।
মুনীরুজ্জামানের তার পর্যবেক্ষণে বলছেন, ” রোহিঙ্গা সংকটের মধ্য দিয়ে বড় ধরনের উগ্র মতবাদ ছড়িয়ে দেয়ার ও বিস্তারলাভ করার একটা ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠী গিয়ে তাদের উগ্র মতবাদ দিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।”
“একই সাথে দেখা যাচ্ছে যে, এখান থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠী সদস্য সংগ্রহ করার জন্য চেষ্টা করছে। আমরা ইতোমধ্যে জানি যে, আরসা নামে যে সংগঠনটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংগঠিত হয়েছে তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভেতর থেকে সদস্য সংগ্রহের জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে।”
প্রায়ই একই তথ্য উঠে আসছে স্থানীয় লোকজনদের কাছ থেকে। হোস্ট কমিউনিটির একজন আমাদের জানিয়েছে রাতে প্রায়ই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাজি ফুটানোর শব্দ পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে গুলির শব্দও পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও রাতে জলসার আয়োজন হয়। এসবের মাঝে আইন শৃংখলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে শতাধিক মানুষের জটলা তৈরি হয়। যেগুলোকে তারা গোপন সভা মনে করছে।
স্থানীয় জনগন ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে এরকম উদ্বেগ থাকলেও পুলিশ বলছে এখন পর্যন্ত ক্যাম্পকে ঘিরে জঙ্গি তৎপরতার কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তারা পায়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, এখন পর্যন্ত ক্যাম্প গুলোতে কোন সন্ত্রাসী বা জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতার খবর আমরা পাইনি। স্থানীয়দের সাথে শরণার্থীদের কিছু ঝামেলা হচ্ছে সেগুলা মিটানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে ক্যাম্পের ভেতরে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড সংগঠিত করার সক্ষমতা রাখা লোকদের একটা তালিকা আমাদের হাতে আছে। আমরা তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছি।
-সিভয়েস
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-