৩৭টি উন্নয়ন প্রকল্পে পাল্টে যাচ্ছে কক্সবাজার

ডেস্ক রিপোর্ট – উন্নয়ন করতে গিয়ে গরিব মানুষের জীবন-জীবিকা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মহেশখালি-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) এর প্রকল্প উপস্থাপনকালে তিনি এই পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটানোই তাঁর সরকারের লক্ষ্য, যাতে তাঁরা সবাই একটি সুন্দর জীবন পেতে পারে। উন্নয়নটা যেন মানুষের জন্য হয়, মানুষের ক্ষতি করে যেন উন্নয়ন না হয়। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, প্রকল্প করতে গিয়ে মানুষের জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। তারা যেন সময়মতো জমির যথাযথ মূল্য পায়, তাতে দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর ‘স্পিচ রাইটার’ মো. নজরুল ইসলাম। কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী নিয়ে বড় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। জাপানের সহায়তায় মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ এই পরিকল্পনার অংশ। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে সেখানে।
শেখ হাসিনা বলেন, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম হলে কেবল ওই অঞ্চলেই নয় পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, একটা সময়ে কক্সবাজারে কিছুই ছিল না। পুরো কক্সবাজারে লবণ চাষ হত ও পান চাষ করত। কক্সবাজারকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। কঙবাজারের জনগণের মতামত নিয়েই এই উন্নয়ন কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারে বিরাট সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লার জেটি এবং একটি এলএনজি টার্মিনাল মাতারবাড়িতে গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি একটি বহুমুখী সমুদ্রবন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, সড়ক, রেল এবং এ সংক্রান্ত আরো বিভিন্ন প্রকল্পসহ মোট ৩৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে তা কেবল মাতারবাড়ি অঞ্চলের উন্নয়নই নয়, সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বিরাট ভূমিকা রাখবে। জাপান, চীন, ভারত এবং কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই মাতারবাড়িতে তাদের বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন মহাসড়কের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে কঙবাজার পর্যন্ত রেলযোগাযোগ স্থাপনের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, যেখানে দ্রুতগতির রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পাশাপাশি কঙবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার কাজও এগিয়ে চলেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের জন্য একটি বিরাট সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী এসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে স্বাধীনতা এবং স্বল্প সময়ে একটি সংবিধান দিয়ে গেছেন এবং তিনি ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মানুষের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ অর্জনের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর স্বপ্ন পূরণ হতে পারেনি কারণ, তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর অসমাপ্ত কাজকে সম্পন্ন করতেই আমরা এখন দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এমআইডিআই প্রকল্পের মূল নকশা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
এসময় প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র তীরবর্তী অর্থনৈতিক করিডোর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পাঞ্চল (ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, সীতাকুণ্ড অর্থনৈতিক অঞ্চল), মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) প্রকল্প এবং সাবরং ইকো ট্যুরিজম পার্ক এই অর্থনৈতিক করিডোরের অন্তর্ভুক্ত।