মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করা ক্যাথলিকদের কাজ নয়, তাই মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে মরক্কোর ক্যাথলিক কমিউনিটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।
মরক্কোয় মুসলিমদের ধর্মান্তরিত করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ধর্মান্তরের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ছয় মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তার পরও অনেকেই গোপনে ধর্মান্তরিত হন। এটা নিয়ে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে পোপ ফ্রান্সিস এমন আহ্বান জানালেন।
রোববার (৩১ মার্চ) এক যৌথ ঘোষণায় পোপ ফ্রান্সিস এবং মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ জেরুজালেমকে খ্রিস্টান, ইহুদি এবং মুসলমানদের ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের’ প্রতীক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
‘জেরুজালেমের প্রতি সবার উত্তরাধিকার রয়েছে, বিশেষ করে একেশ্বরবাদী তিন ধর্মের অনুসারীদের’ বলে বিবৃতিতে লেখা হয়েছে।
‘জেরুজালেমের সুনির্দিষ্ট বহুধর্মীয় চরিত্র, আধ্যাত্মিক মাত্রা এবং বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিচয় অবশ্যই রক্ষা এবং উৎসাহিত করতে হবে’ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তধর্মীয় সংলাপকে উৎসাহ দিতে মরক্কো সফর করেন বিশ্বের এক দশমিক তিন বিলিয়ন ক্যাথলিক খ্রিস্টানের এই আধ্যাত্মিক নেতা। গত ৩৪ বছরে এটি ছিল একজন পোপের প্রথম মরক্কো সফর। এর আগে ১৯৮৫ সালে দ্বিতীয় জিন পলের প্রথম মরক্কো সফর করেছিলেন।
রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ হচ্ছেন ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো অপারেশনের’ তৈরি একটি কমিটির প্রধান, যেটি জেরুজালেমের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং স্থাপত্যগত ঐতিহ্য রক্ষা এবং উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গতবছর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিরা এতে ক্ষিপ্ত হয়েছেন। কেননা তারা এটিকে তাদের ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে।
মরক্কো সফরের দ্বিতীয় দিনে পোপ সেদেশের ছোট্ট ক্যাথলিক কমিউনিটির প্রতি উগ্রবাদ দমনে মুসলমানদের সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘এভাবে আপনারা ভেদাভেদ এবং অজ্ঞতাকে পুঁজি করে ভয়, ঘৃণা এবং সংঘাত সৃষ্টির সব চেষ্টার মুখোশ খুলে দিতে এবং সেগুলো বানচালে সক্ষম হবেন।’
এর আগে শনিবার পোপ ফ্রান্সিস উগ্রবাদকে অস্বীকার করে ইসলামের আলোকে গৃহীত মরক্কোর বিশেষ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানান।
উল্লেখ্য, বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদের আমন্ত্রণে পোপ এই দুই দিনের সফরে মরক্কো আসেন। ‘আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক উন্নয়নে’র অংশ হিসেবে পোপকে এ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কোনো মুসলিম দেশে পোপ ফ্রান্সিসের এটি দ্বিতীয় সফর। এর আগে প্রথমবারের মতো আরব আমিরাত সফর করেন পোপ ফ্রান্সিস।
১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা লাভের আগে মরক্কোতে প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ক্যাথলিক ছিল। তখন সেখানে ২শ’টির বেশি ক্যাথলিক গির্জা ছিল। এখন দেশটিতে মাত্র ৪৪টি গির্জা আছে।
মরক্কোর বাদশাহ নিজেকে ‘বিশ্বাসীদের নেতা’ এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও দেশটির সংবিধানে ‘সকল ধর্মের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত’ করা হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-