গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল
কে এই নুর মোহাম্মদ………..?
- তুলে ধরা হলো ডাকাত নুর মোহাম্মদসহ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কিছু অজানা তথ্য।
গত ২২ আগস্ট টেকনাফে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যা করার পর থেকে বেরিয়ে আসছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদের অনেক অজানা কাহিনী!
অনুসন্ধানে জানা যায়,গত ২২ আগস্ট ছিলো নুর মোহাম্মদের মেয়ের কর্নছেদন অনুষ্ঠান। এই অনুষ্টানটি জাদিমোড়া পাহাড়ী এলাকায় জনৈক মেহের আলীর বাগান বাড়ীতে অনুষ্টিত হয়। বড় বড় দুটি গরু জবাই করে কক্সবাজার হতে গানের শিল্পী এনে মহাধুমধামের সাথে দিনে ও রাতে চলে কর্নছেদন অনুষ্টানের জমকালো আয়োজন।
এই অনুষ্টানে তার শুভাকাঙ্খী ও মাদক কারবারে জড়িত অপরাধীরা দাওয়াত খেতে এসে মেয়ের জন্য উপহার হিসেবে দেয় ৪৫ লাখ নগদ টাকা ও এক কেজি পরিমান স্বর্ণালংকার।
এ অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে নুর মোহাম্মদের ডান হাত লম্বা ওরপে কালা সেলিমের সাথে নুর মোহাম্মদ গ্রুপের অপর সদস্যদের মধ্যে মদপানরত অবস্থায় গন্ডগোল বাধে।
কালা সেলিম বিষয়টি তার বস নুর মোহাম্মদকে মোবাইলে বিচার দেয়। তখন নুর মোহাম্মদ ঘটনাস্থলে না থাকায় কালা সেলিম বসকে এগিয়ে আনতে যাওয়ার সময় পথে টর্চ লাইটের আলো ফেলা নিয়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকের সাথে তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে ডাকাত কালা সেলিমের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা উমর ফারুককে ঘটনাস্থলে গুলিকরে হত্যা করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নুর মোহাম্মদ অত্র এলাকায় অবস্থান করে থাকলেও সে খুবই কৌশলী। রোহিঙ্গা শিবির বা টেকনাফের কোথাও সে ভোটার বা নিবন্ধন হয়নি। ফলে এখানে তার কোন তথ্য উপাত্ত সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।
সে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাংলাদেশী হিসেবে ভোটার আইডি সংগ্রহ করেছে বলে একটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের মংডু এলাকা হতে ১৯৯১ সালের পরে নাফনদী পাড়ি দিয়ে কালা মিয়ার ছেলে নুর মোহাম্মদ জাদিমোড়া এলাকায় অবস্থান নেয়। এরপর থেকে আস্তে আস্তে গড়ে তোলে একাধিক স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ।
মিয়ানমার আরসা সামরিক প্রধান হাফেজ আতাউল্লাহ’র ডান হাত হিসেবে পরিচিত নুর আলম ডাকাত অবস্থান করতেন টেকনাফের নয়াপাড়া শরনার্থী ক্যাম্প এলাকায়। নয়াপাড়াতে দু’স্ত্রী ও লেদা অনিবন্ধিত ক্যাম্পে অপর একটি স্ত্রী অবস্থান করায় নুর আলম এই দুই ক্যম্পের মধ্যে সমান তালে আধিপত্য বিস্তার করতেন। এ ছাড়া আরসা প্রধান হাফেজ আতাউল্লাহ’র সাথে ভিডিও তে নুর আলমকে ভারী অস্ত্র হাতে ডান পার্শ্বে দেখা যাওয়ায় তাকে সবাই সমিহ করে চলতো। অবশেষে এই নুর আলম ডাকাত র্যাব-৭ এর হাতে আটক হয়ে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার, আবার পরে জামিনে মুক্ত হয়ে তার অবস্থান আরো শক্ত হয়ে যায়।
খবর নিয়ে জানা যায়, ২০/২৫ জনের এই গ্রুপের অপর কয়েকজন উপ-প্রধান হচ্ছেন, জাদিমুড়ার নুর মোহাম্মদ, মুছনী নয়াপাড়ার লম্বা প্রকাশ “কালা” সেলিম,মাষ্টার আবুল কালাম আজাদ, খাইয়ুর আমিন।
এ গ্রুপটি ২০১৬ সালের ১৩ মে ভোররাতে নয়াপাড়া শালবন আনসার ব্যারকে হামলা চালিয়ে খুন করে আনসার কমান্ডার আলী হোসেনকে। লুট করে নিয়ে যায়,২টি এসএমজি,৫ টি চায়না রাইফেল, ৪ টে শর্টগান ও ৬৭০ টি গুলি। পরে অবশ্য অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে র্যাব-৭। এ গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছে নুরুল আলম,হাসেম, হাসান, জামাল, রুবেল, মাহামুদুল হাসান ও শুক্কুর। এ গ্রুপের প্রধান নুর আলম গত জানূযারী মাসের প্রথম দিকে জেল হতে বের হয়। পুনরায় সংগঠিত হয়ে লেদা ও নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিমে আলীখালী পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে অপর্কম চালায়। সম্প্রতি আলোচিত সেই নুরুল আলম ডাকাত ‘বন্দুক যুদ্ধে’ নিহত হয়। এখন তার সেকেন্ড ইন কমান্ড “কালা” সেলিম দায়িত্ব পালন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই কালা সেলিমের নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী টেকনাফের লেদা ওযার্ড যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুককে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করে। ঐ সময় তাদের হাতে ভারী অন্ত্রসহ বিদেশী পিস্তল ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছে।
এ ছাড়া নয়া পাড়া ভিত্তিক জহির গ্রুপ, রহিমুল্লাহ গ্রুপ ও রাজ্জাক গ্রুপসহ আরো বেশ কটি স্বশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয় ভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
টেকনাফের বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবির ও গহীন পাহাড়ে তারা স্বশস্ত্র ভাবে সংগঠিত হয়ে আছে। তারা পাহাড়ী এলাকায় গড়ে তুলেছে একাধিক আস্তানা। সেখানে পরিচালিত হচ্ছে স্বশস্ত্র প্রশিক্ষন। এদিকে এই সমস্ত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলের সদস্যদের আইনের আওতাই নিয়ে আসার জন্য টেকনাফ থানা পুলিশের সাঁড়াশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক দিনের ব্যবধানে যুবলীগ নেতা ফারুক হত্যার অন্যতম তিন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
সেই সুত্র ধরে শীর্ষ ডাকাত নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগী ডাকাত আমান উল্লাহকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে টেকনাফ থানা পুলিশ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-