পর্যটন শহরের বেহাল সড়ক, দুর্ভোগ চরমে

শাহীন মাহমুদ রাসেল

বর্ষায় বৃষ্টিপাতে রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা কোনো নতুন বিষয় নয়। এবারের বর্ষায়ও রাস্তা-ঘাটের দুর্দশার পুরনো চিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন শহর কক্সবাজারের সড়কগুলো শোচনীয় অবস্থায় উপনীত হয়েছে।

সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চিরাচরিত গাফিলতির কারণে অলিগলি থেকে শুরু করে অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো ড্রেন না থাকায় বৃষ্টির পানির সাথে কাঁদামাটি এসে একদিকে যেমন রাস্তার বড় অংশ দখল হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে বৃষ্টির পানিতে কর্দমাক্ত হয়ে যানবাহন ও পথচারিদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতেই একটু বৃষ্টিতে অনেক রাস্তা তলিয়ে যায়। এর মধ্য দিয়েই যানবাহন চলাচল করায় সড়কের বিটুমিন উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়।

সড়কের এই বেহাল দশা নিয়ে শুরু হয় পৌরসভা ও সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ। যুগের পর যুগ দোষারোপের এই অপসংস্কৃতি চললেও এ থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি অমীমাসিংতই থেকে যায় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

টেকপাড়ার কলেজ ছাত্রী ফরহানা রুমি বলেন, শুধু পৌর শহর বা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক গুলোই নয়, এবারের বর্ষায় কক্সবাজার জেলার গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত সড়কও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনগণের শত শত কোটি টাকায় নির্মিত সড়কগুলো পানিতে ভেসে যাচ্ছে। তবে বর্ষায় সড়কের ক্ষতি যতটা না হয়, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়, নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে নির্মাণ করার ফলে।

স্থানীয়রা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যারা সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজে সারা বছর নিয়োজিত থাকে, তাদের জন্য এ ক্ষতি আনন্দের হতে পারে। এর কারণ, সড়কের ক্ষতি তাদের বাণিজ্যের দ্বার খুলে দেয়। জনগণ জানে, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের সাথে যারা থাকেন, এর মাধ্যমে তাদের পকেট ভারি হয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকা এই শ্রেণী লুটেপুটে খেলেও তাদের কিছু করার থাকে না। সড়কে স্বচ্ছন্দে ও নির্বিঘ্নে চলাচলের তাদের যে অধিকার, তা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না।

তারা আরোও বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক-বর্তমান মেয়রদের নির্বাচনের আগে বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাদের এ কথার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। চিরায়ত অপসংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় বর্ষায়ই রাস্তার বেহাল দশা হয়ে দাড়ায়। রাস্তার মাঝে গর্তে মাটি চাপা দিয়ে চলে গেলেও তা সেভাবেই পড়ে থাকে। সংস্কার আর করা হয় না।

জানা যায়, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা আছে, অতিগুরুত্বপূর্ণ সড়ক ২৮ দিনের মধ্যে উন্নয়ন কাজ শেষ করে পুনরায় রাস্তা মেরামত করতে হবে, সেখানে মাসের পর মাস তা বেহাল অবস্থায়ই পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে বৃষ্টির পানিতে রাস্তাগুলো তলিয়ে গর্ত হয়ে অনেকটা মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়। এসব গর্তে যানবাহন পড়ে বা আটকে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে। অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছে।

কক্সবাজারকে ‘ক্লিন সিটি, গ্রিণ সিটি’ করার কথা শহরবাসী অহরহ শুনছে। বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। বরং বৃষ্টি ও নর্দমার পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। সড়কগুলো কাটাছেঁড়া করার ফলে পরিস্থিতি আরও করুণ হয়ে পড়ছে। মানুষের যাতায়াত ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। সরকারের তরফ থেকেও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ করে সড়ক পথ নির্বিঘ্নে ও মসৃণ করার জন্য বহুমুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নিরাপদ সড়ক চাই কক্সবাজার জেলার নেতারা বলেন, বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, সড়ক উন্নয়নের কাজ হচ্ছে ঠিকই, তবে সেগুলো টেকসই হচ্ছে না। কিছুদিন আগে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের এক অংশ কার্পেটের মতো উঠে যাচ্ছে। এত অর্থ ব্যয়ে নির্মিত চার লেনের অবস্থা যদি এমন হয়, তবে বাকিগুলোর অবস্থা কি তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার কিছু নেই।

তারা আরোও বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ মহলের কর্মকর্তারা পর্যটক শহরে প্রতিদিন রাস্তা-ঘাটের পরিস্থিতি দেখতে ছুটে বেড়ান। যেখানে অনিয়ম দেখতে পান, তা নিরসনে তাৎক্ষণিক নির্দেশও দেন। তারপরও সড়কগুলোর বেহাল দশা কাটছে না।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে সড়কের সংস্কার কাজ অব্যাহত রয়েছে। টানা বৃষ্টির ফলে কাজের ব্যাঘাত হচ্ছে। বৃষ্টি থামলে কাজ শেষ করা হবে।