কড়াকড়িতে বিভিন্ন এলাকা থেকে পালিয়ে ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে শত শত রোহিঙ্গা

রফিকুল ইসলাম •

রোহিঙ্গাদের এনআইডি প্রাপ্তি ও ভোটার তালিকাভুক্তির ঘটনা নিয়ে সর্বত্র তোলপাড় চলছে। কোন কোন এলাকায় প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করছে অবৈধ ভাব রোহিঙ্গা অবস্থান উচ্ছেদ করতে। সংশ্লিষ্টদের কঠোর অবস্থানের কারণে গত এক সপ্তাহে কয়েক শত রোহিঙ্গা পুরনো এলাকা ছেড়ে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

গতকাল বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর)দুপুর তিনটার দিকে উখিয়ার কুতুপালংয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার ট্রানজিট ক্যাম্পের পাশে গাট্রি পোটলা নিয়ে বেশ কিছু মানুষের জটলা দেখা যায়। এগিয়ে গিয়ে জানা গেল তারা আজই চট্রগ্রামের পটিয়া উপজেলা থেকে এখানে এসেছে। অন্তত ১৭/১৮ পরিবারের ৭৫/৮০ জনের মত নারী, পুরুষ ও শিশু এসেছে।

তাদের মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইনের বুচিডং টাউন শীপের খানসামা এলাকার আমির হামজার ছেলে জাহেদ আলম(২৮) স্ত্রী নছিমা ও এক কন্যা শিশু সহ কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে এসেছে। তারা একই সাথে ১২ পরিবারের ৫৩ জন এসেছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছিপাতলী জমিদার খিল থেকে। মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনের সাহেব বাজার এলাকার মৃত আবদুল আমিনের ছেলে আবুল কালাম (২৫) এসেছে পটিয়ার একই এলাকা থেকে। সাথে তার স্ত্রী ও ছোট দুই ছেলে মেয়ে রয়েছে।

সে জানালো পটিয়ায় বেশ কয়েকদিন ধরে পুলিশ গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে অবৈধ ভাবে অবস্থান কারী রোহিঙ্গাদের পরিবার পরিজন নিয়ে থানায় এসে আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দেয়। তাদের মত বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে পুলিশ আটক করে জেলে দিয়েছে। সেও তিনদিন হাজত কেটেছে বলে জানায়। প্রশাসনের কড়াকড়ির মূখে কোন উপায় না দেখে কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে চলে আসতে বাধ্য হয় বলে রোহিঙ্গারা জানায়।

আছিয়া খাতুন (৫৫) জানান ১৯৯২ সালে শরণার্থী হয়ে এসে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বার্মা ফিরে যায়।সেখানে স্বামীর মৃত্যুর ফলে ১৯৯৭ সালে আরও অনেকের সাথে আবারও বাংলাদেশে চলে এসে পটিয়া গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে স্থানীয় লোকজনের ঘর বাড়ীতে দিন মজুরী করে কোন রকমে চলছিল। অবশেষে পুলিশের কড়াকড়িতে সেখান থেকে অনান্য রোহিঙ্গাদের সাথে কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে চলে এসেছে বলে সে সহ অন্য রোহিঙ্গারা জানায়।
শাহাদত(২২) ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়,আমাদের মত গরীব দিন মজুর অসহায় রোহিঙ্গাদের ওপর যত নির্যাতন।চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান সহ শহর গুলোতে হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের সাথে এদেশের নামীদামী লোকজনের সুসম্পর্ক থাকায় তারা বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছে। সে সব ধরণের রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে আটক পূর্বক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনার দাবী করে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক, পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন  চৌধুরী বলেন,সারা দেশে ক্র্যাশ কর্মসূচীর মাধ্যমে অবৈধ ভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের আটক করে ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে খবর নিয়ে জানা গেছে গত দুই দিন আগে ঐ ক্যাম্পে ৭৬ পরিবার ছিল। সোমবার ও মঙ্গলবার এসেছে ৪২ পরিবার, আর বুধবার এসেছে ১৮ পরিবার। তবে শরণার্থী সংস্হার ঐ ক্যাম্পের কেউ কোন তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। কুতুপালং ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ রেজাউল করিম বলেন,উক্ত ট্রানজিট ক্যাম্প দেখভালের দায়িত্ব আমার থাকলেও বর্তমানে এটি শরণার্থী সংস্থা দেখে থাকে। কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ চট্রগ্রামের পটিয়া উপজেলা থেকে আসা।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ সামচ্ছু দৌজা এব্যাপারে কোন কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে ফেরাতে কাজ করছে সরকার। আমরা নিজেরাও এ নিয়ে কঠোর ভাবে কাজ করে আসছি। যেসব রোহিঙ্গা নিজ উদ্যোগে ক্যাম্পে ফিরবে না তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ট্রানজিট ক্যাম্পে রোহিঙ্গা  আশ্রয়ের ব্যাপারে তিনি  অবহিত নয় বলে জানান।