
বিশেষ প্রতিবেদক •
কক্সবাজারের উখিয়ায় হালনাগাদ ভোটার তালিকায় নাম উঠাতে গিয়ে ফের রোহিঙ্গা আটক হয়েছেন। শুক্রবার (৪অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটক দেলোয়ার হোসেন (২০) উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালী গ্রামের আবদুর রহিমের পুত্র বলে জন্ম সনদে উল্লেখ রয়েছে।

জানা যায়, আটক দেলোয়ার হোসেন (২০) জন্ম নিবন্ধন, চারিত্রিক সনদ পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যায়ন সহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র নিয়ে ভোটার হওয়ার জন্য ছবি তুলতে সোনার পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে গেলে সন্দেহ হলে উখিয়ার নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ইসা সুকৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এক পর্যায়ে নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন। পরে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে জালিয়াপালং ইউনিয়নে ২য় দিনের মত ভোটার হতে গিয়ে রোহিঙ্গা আটকের বিষয়ে উখিয়াজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আটক রোহিঙ্গার হাতে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক গৃহীত জন্মনিবন্ধন, চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যায়ন পত্র পাওয়ার বিষয়টির তীব্র সমালোচনা করেছেন সচেতন মহল।

তারা বলেন, সরকার রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিলেও জালিয়াপালং ইউনিয়নে পরপর রোহিঙ্গা ভোটার হতে গিয়ে পরিষদ কতৃক গৃহীত কাগজপত্রের দায় এড়াতে পারেন না। যাচাই -বাছাই না করে প্রত্যায়ন প্রদান সহ এহেন কর্মকান্ড সমীচীন নহে। ইউনিয়ন পরিষদ টাকার বিনিময়ে এসব প্রদান করেছে কিনা তার সুষ্টু তদন্ত দরকার বলে অভিমত তাদের।
অন্যদিকে আটক দেলোয়ার হোসেন (২০) এর কাছে সত্যায়িত শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ পাওয়া বিষয়টি ও গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। রোহিঙ্গারা এইভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হলে স্থানীয়দের অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে।
অভিযোগে জানা যায়, ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সনদ প্রদানের অভিযোগ উঠলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শন করে সতর্ক করেন।
স্থানীয় কয়েকজন যুবক জানান, বাংলাদেশী হওয়া স্বত্বেও ফরম সংকট ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক গৃহীত কাগজপত্রের কারণে ভোটার হালনাগাদ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে পারিনি। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফরম ও ইউনিয়ন পরিষদের গৃহীত কাগজের কোন সংকট হয় নি। তারাই ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করছেন। পরপর ৪ জন রোহিঙ্গা সরকারের এত বাধ্যবাধকতার পরে ও এতো কাগজ কোথায় পেলো? জনপ্রতিনিধিরা জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত।
উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আটক রোহিঙ্গা ছেলেটি মিয়ানমারের নাগরিক। সে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে টাকা দিয়ে ভোটার হতে চেয়েছিল বলেও স্বীকার করেছে।
সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ব্যক্তিকেও এ ব্যাপারে আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ চলছে। আটক রোহিঙ্গাদের নামে ইস্যুকৃত জন্মনিবন্ধন সনদ বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হচ্ছে বলেও জানান ইউএনও।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩অক্টোবর) উখিয়ায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ছবি তুলতে এসে ৩ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনার পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। পরে তিন রোহিঙ্গাকে এক মাস করে জেল দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
উখিয়ার অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ বেদারুল ইসলাম জানান, উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের তথ্য সংগৃহীত ও যাচাইকৃত নাগরিকের ভোটার অর্ন্তভূক্তির দিন ছিল বৃহস্পতিবার।
এসময় বিকেলে ছবি তুলতে আসা উক্ত ইউনিয়নের ডেইল পাড়া গ্রামের আবদুল হামিদ (৩২), নুর হোসেন (২৮) ও মুর্শিদা আকতার (২৫) কে সন্দেহ হলে উখিয়া নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মোঃ ইসা ও মোঃ সোহেল জিজ্ঞাসাবাদ করে। এসময় তারা রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করে। এরপর তিনজনকে বুথ থেকে পুলিশের মাধ্যমে আটক করা হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-