রোহিঙ্গাদের ভাষাণচরে স্থানান্তর স্থগিতের ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রীকে ৩৯ সংগঠনের সাধুবাদ

অনলাইন ডেস্ক • রোহিঙ্গাদের ভাষাণচরে স্থানান্তর স্থগিতের ঘোষণাকে স্বাগতম জানিয়েছে জাতিসংঘসহ ৩৯টি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো এক চিঠির মাধ্যমে পদক্ষেপটিকে সাধুবাদ জানিয়েছে তারা। ১২ই নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিষয়ক মন্ত্রী এনামুর রহমান, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার, মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিউর ইয়াংহি লী ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডিকে এই চিঠি পাঠিয়েছে সংগঠনগুলো। এ খবর দিয়েছে অনলাইন রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল।

গত ৩রা নভেম্বর এনামুর রহমান রোহিঙ্গাদের ভাষাণচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা স্থগিত করার ঘোষণা দেন। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের যেকোনো ধরনের স্থানান্তর স্বেচ্ছাকৃত হবে বলে জানান। চিঠিতে সংগঠনগুলো  বাংলাদেশ সরকারের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লিখেছে, আমরা আপনার প্রশাসনকে রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতির যেকোনো সম্ভাব্য সমাধান ও পরিকল্পনা সম্পর্কে তাদের সঙ্গে অর্থবহ আলোচনা করার আহ্বান জানাই। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মুক্ত, পূর্ববর্তী ও জ্ঞাত সম্মতি নিয়ে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানিয়েছে তারা।

ভাষাণচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর স্থগিতের পাশাপাশি আগামী ১৭ থেকে ১৯শে নভেম্বর দ্বীপটির কারিগরি মূল্যায়ন করতে জাতিসংঘকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ।
<
এক ঘোষণায় তা নিশ্চিত করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ কামাল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘোষণার প্রতিও সাধুবাদ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তারা, এই মূল্যায়নের ফলাফল সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

তারা বলেছে, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে জরুরি আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানের আমরা আপনার নেতৃেতর স্বীকৃতি দিচ্ছি। এই রোহিঙ্গারা ২০১৬ ও ২০১৭ সালে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের নির্মম হামলা থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই দুই বছরের আগে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সমর্থন দেয়া নিয়েও বাংলাদেশের ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়েছে। বলেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বিকল্প স্থায়ী সমাধান বের করার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতি তাদের সম্মান রয়েছে। তবে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের শিবিরগুলো থেকে ভাসাণচরে সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তারা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তথ্যবহুল আলোচনা ও তাদের সম্মতি ছাড়া এ প্রক্রিয়া সম্পন্নের ব্যাপারে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সংগঠনগুলো চিঠিতে লিখেছে, বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবারের অনুমতি না নিয়েই তাদের ভাসাণচরে স্থানান্তরের জন্য বাছাই করেছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজারে অবস্থানরত বহু শরণার্থী এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে, এ নিয়ে ভীতি প্রকাশ করেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিউর ইয়াংহি লী রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। বলেছিলেন, ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা ও শরণার্থীদের অনুমতি ছাড়া তাদের স্থানান্তর করা হলে নতুন সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া মার্চ মাসে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই-কমিশনার এক বিবৃতিতে বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাসাণচরে স্থানান্তরের যেকোনো প্রক্রিয়া অবশ্যই স্বেচ্ছাকৃত হতে হবে। পাশাপাশি, প্রকল্পটি সম্পর্কে সরকারের কাছ থেকে তাদের প্রাসঙ্গিক, সঠিক ও সময়োপযোগী তথ্য প্রদান করতে হবে। যাতে করে শরণার্থীরা স্বাধীন ও তথ্যবহুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

ভাসাণচরে জাতিসংঘের মূল্যায়ন সফর নিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, এই মূল্যায়নে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার পাশাপাশি সেখানে তাদের থাকার জন্য করা ব্যবস্থার নিরাপত্তা, ধারণক্ষমতা ও স্থানান্তরের সম্ভাব্যতার দিকে জোর দেয়া উচিৎ। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, বাংলাদেশ সরকার চরটিতে রোহিঙ্গাদের আবাসস্থানের জন্য বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে বাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্র, গুদামঘর, রাস্তা ও একটি সোলার পাওয়ার গ্রিড রয়েছে। তবে মানবাধিকার ও শরণার্থী বিশেষজ্ঞরা দ্বীপটি সফর শেষে সেখানকার আবাসনস্থল নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি। উদাহরণস্বরূপ, এ বছরের জানুয়ারিতে ইয়াংহি লী বলেছিলেন, চরটিতে এখনো বেশকিছু বিষয় সম্পর্কে আমি সফর করেও জানতে পারিনি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, চরটি আদৌ বসবাসযোগ্য কিনা।

চিঠির শেষাংশে সংগঠনগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি শরণার্থী তাৎক্ষণিকভাবে শিবিরগুলোয় মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বলেছে, ভাসাণচর সম্পর্কে নতুন তথ্য জানতে এ সেবা তাদের জন্য অপরিহার্র্য। প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে শিবিরগুলোয় মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।

চিঠিটিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে- আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আর্টিকল ১৯, ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিল, ফর্টিফাই রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি।