কক্সবাজারেও দ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখেছে তাবলিগ জামাত

শাহেদ মিজান •


গত বছর ইজতেমা নিয়ে তাবলিগ জামাতের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছিলো। সা’দপন্থী এবং দেওবন্দপন্থী দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো তাবলিগ জামাতা। মত পার্থক্যে নিয়ে সৃষ্ট এই দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত তীব্র সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিলো। এতে দু’পক্ষে বেশ সমর্থক আহতও হয়েছিলো। এই ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি করেছিলো। শুধু তাই নয়; এই দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এতে দেশের সর্বপ্রান্তে দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো তাবলিগ জামাত। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা দু’পক্ষ দু’দফায় আলাদাভাবে করার মাধ্যমে সাময়িক সমাধান মিলেছিলো। তবে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব রূপ নিয়েছিলো স্থায়ীরূপে। এই দ্বন্দ্ব থেকে জেলা পর্যায়েও আলাদাভাবে নিকট সময়ের মধ্যে দুইবার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ওই বছরও।

এদিকে সারা বছর তেমন আলোচনায় ছিলো না তাবলিগ জামাতের দু’গ্রুপের এই দ্বন্দ্ব। তবে ইজতেমার মৌসুম আসায় আবারো মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে এই দ্বন্দ্ব। যার অংশ হিসেবে আগামী জানুয়ারিতে টঙ্গীতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমা এবারও দু’গ্রুপে আলাদাভাবে দু’বার অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। কিন্তু তার আগেই কক্সবাজার জেলা ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ইতিমধ্যে গত ৭,৮ ও ৯ নভেম্ববর দেওবন্দপন্থী তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে তিনদিনের ইজতেমা সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু দ্বন্দ্বের অংশ হিসেবে আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে আলাদাভাবে তিন দিনের ইজতেমা আয়োজন করতে যাচ্ছে সা’দপন্থী গ্রুপ। ইতিমধ্যে তারা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। গতবছরও তারা আলাদাভাবে ইজতেমা আয়োজন করেছিলো।

সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আস্থার ঠিকানা তাবগিল জামাতের এই দ্বন্দ্ব তাদের মাঝে চরম বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে। হুজুগের বশে অনেকে পক্ষ অবলম্বন করে দেওবন্দ ও সা’দ পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়লেও অনেকে বরাবরই থেকে গেছে চরম দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। এই নিয়ে তারা বিব্রতবোধও করছে। ইজতেমাকে ঘিরে এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বও আবারো মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে। তবে অধিকাংশ তাবলিগ প্রেমী সাধারণ মুসলমান এই দ্বন্দ্ব নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ রয়েছেন। তবে এই প্রেক্ষিতে দু’গ্রুপই নিজেদের ‘আসল’ তাবলিগ দাবিতে অনড় রয়েছেন। এই নিয়ে কোনো পক্ষ অপর পক্ষকে কোনো রকম ছাড় দিচ্ছে না। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে এর কোনো সমঝোতা বা সহাবস্থানের আদৌ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এই নিয়ে উদারপন্থী আলেমরা বেশ হতাশ রয়েছেন।

দেওবন্দ পক্ষের দাবি, বাংলাদেশের ইসলাম ও মুসলমানের ঈমান-আকিদাকে ধ্বংস করতে ভারত চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এর অংশ হিসেবে ষড়যন্ত্র করে কাকরাইল ভিত্তিক তাবলিগ জামাত বিভক্ত করে ফেলে। ‘বিতর্কিত’ ভারতের মাওলানা সা’দকে দিয়ে ভারত তাদের বদ উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করছে।
তবে সা’দপন্থী পক্ষের দাবি, তারা কোনো পক্ষের সাথে প্রতিযোগিতা করছে না। তারা ইসলামকে আরো প্রসারিত করতে দাওয়াতি কাজের অংশ হিসেবে আলাদাভাবে ইজতেমাসহ বিভিন্ন হেদায়েতমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দেওবন্দপন্থী তাবলিগ জামাতের কক্সবাজার জেলা আমির মুফতি মোর্শেদুল আলম বলেন, ‘সা’দপন্থী বাতিল ধারার তাবলিগ পন্থীরা বাংলাদেশের তাবলিগ নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তারা বাংলাদেশের ইসলাম ও মুসলমানদের ঈমান ধ্বংস করার জন্য ধোকাবাজি করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে আসা টাকা দিয়ে মূল ধারার তাবলিগ জামাতের ইজতেমার বিরুদ্ধে পাল্টা ইজতেমা করছে। তবে তাদের সাথে স্থানীয় কেউ নেই। বাইরের জেলা থেকে লোক ভাড়া এনে ইজতেমা করছে। এই নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।’

অভিযোগের ব্যাপারে সা’দপন্থী তাবলিগ জামাতের কক্সবাজার জেলা আমির ও ইজতেমা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ফরিদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কারো সাথে প্রতিযোগিতামূলকভাবে ইজতেমাসহ কোনো দাওয়াতি কাজ করি না। আমরা কারো প্রতিপক্ষও নই। শুধু ইসলামের আলোকে আরো বেশি প্রচার ও প্রসারিত করতে এবারো কক্সবাজারে ইজতেমার আয়োজন করেছি। এটা নিয়ে কেউ বিভ্রান্তি ছড়ালে সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই।’

সাধারণ মুসলমানদের দাবি, দীর্ঘদিন বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত একত্রিতভাবে ইসলামের দাওয়াতের জন্য বিভিন্ন হেদায়েতমূলক কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে। তাবলিগ জামায়াতের ছোঁয়ায় অনেক পথভ্রষ্ট মানুষ হেদায়েত প্রাপ্ত হয়ে দ্বীনের পথে ফিরে এসেছে। অনেক মানুষ দ্বীনের সঠিকজ্ঞান লাভ করেছে, শিখতে পেরেছে নামাজ-কালাম। কিন্তু বিভক্তির কারণে তাবলিগ জামাতের কর্মকান্ড নিয়ে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। তার প্রভাব পড়ছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে। তাই কোনো গ্রুপ বা দ্বন্দ্ব নয়; সবাইকে একত্রিত হয়ে তাবলিগ জামাতের আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।