বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে বন্য হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছিল, অবশেষে মামলা

(ফলোআপ)

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান)
বান্দরবানের লামায় বন্য হাতি হত্যার ঘটনায় অবশেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে লামা বন বিভাগ। লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এস. এম. কায়চার জানিয়েছেন, লামা সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খাঁন বাদী হয়ে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৩৬(১) ধারা মোতাবেক অপরাধীর বিরুদ্ধে পিওআর মামলা রুজু করেছে।

তিনি আরো বলেন, লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী পূর্ব চাককাটা এলাকায় বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে বন্য হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ঐ এলাকার কৃষক মো. আব্দুল্লাহ (৫২) কে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া সোমবার বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

লামা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারী সার্জন ডাঃ জুয়েল মজুমদার জানান, কুমারী পূর্ব চাককাটার মৃত হাতির ময়না তদন্ত রিপোর্টে বৈদ্যুতিক শকে মৃত্যুর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এই মৃত হাতির ব্যাকটোরোজিক্যাল বা কেমিক্যাল পরীক্ষা করা হয় নাই। বন্য প্রাণী হত্যার অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে মহাখালী ইন্সটিটিউট অব পাবলিক অথরিটিতে বন বিভাগ এ সকল পরীক্ষা করাতে পারে।

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নাগিস সুলতানা ও অসীম মল্লিক জানান, একটি বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে কয়েকটি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস.এম. কায়চার জানান, সকল পরীক্ষা নিরীক্ষার দায়িত্ব ভেটেরিনারী সার্জনের। ভেটেরিনারী সার্জনের রিপোর্টের উপরেই বন বিভাগ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

সম্প্রতি উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর ২টি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে সঠিক তদন্ত প্রয়োজন উল্লেখ করে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-এ-জান্নাত রুমি জানান, অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্য প্রাণীকে সংরক্ষণ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, লামা উপজেলায় গত ১৫ বছরে কমপক্ষে ১৩টি হাতি বিভিন্ন কারণে মারা যায়। যার মধ্যে

উল্লেখযোগ্য, গত ১৬ নভেম্বর ২০১৯ইং লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী চাককাটা এলাকায় ১টি হাতির শাবককে বিদ্যুতাড়িত করে হত্যা করা হয়। গত ০৪ নভেম্বর ২০১৯ইং উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা এলাকায় লেকের কাদা পানিতে আটকে ৩ বছরের আরেকটি হাতির শাবক মারা যায়।

গত ০২ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ইং উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের মিনঝিরি এলাকায় দুষ্কৃতকারীদের হাতির দাঁত ও হাড়গোড়ের জন্য বয়স্ক ১টি হাতিকে হত্যা করে। গত ২৫ আগস্ট ২০১৫ইং লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সানমার গ্রুপ গুলি করে ১টি হাতি হত্যা করে মাটিতে পুঁতে দেয়, পরে তার বন বিভাগ উদ্ধার করে মামলা করে। গত ২০০৫ সালে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা এলাকায় এ্যানথ্রেক্স আক্রান্ত হয়ে ১টি বয়স্ক হাতি মারা যায়। গত ১২ অক্টোবর ২০০৪ইং লামার ফাঁসিয়াখালীর বড়ছনখোলা এলাকায় ফাঁদে ফেলে ১টি হাতিকে মারা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)- এর করা জরিপ মতে, ২০০১ থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার ৬টি উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে দাঁত ও হাড়গোড়ের জন্য ১৫৯টি হাতি হত্যা করা হয়।