রোহিঙ্গা ইস্যু: গাম্বিয়ার মামলা লড়বে মিয়ানমার, নেতৃত্ব দিবেন সু চি

রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গণহত্যার অভিযোগে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় আদালতে লড়াই করবে মিয়ারমারা। আর এতে নেতৃত্ব দিবেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি।

মিয়ানমারের সরকার বুধবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর রয়টার্সের।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়ে, গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বড় মাপের আন্তর্জাতিক আইনজীবী নিয়োগ দেবে মিয়ানমার। এটি তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার লড়াই। ইউনিয়ন মিনিস্টার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স হিসেবে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি তার ক্ষমতাবলে এই দলের নেতৃত্ব দিবেন।
সম্প্রতি জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটনের দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া।

সাধারণত দুই দেশের মধ্য বিদ্যমান কোনও বিবাদ নিরসনের কাজ করে থাকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। এই আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলা অনেক ভ্রুকুটির জন্ম দিয়েছে। কেননা, মিয়ানমার থেকে প্রায় ৭ হাজার মাইল দূরে গাম্বিয়া। রোহিঙ্গা সংকটের সঙ্গে গাম্বিয়ার কোনও ধরনের দৃশ্যমান যোগসূত্রও নেই।

তাহলে কেন এত দূরের একটি সংঘাতের বিচার নিশ্চিতের জন্য আফ্রিকার এই ছোট্ট দেশটি উদ্যোগী হল?

ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টি গাম্বিয়ার জন্য একেবারেই নিজস্ব। গত বছর গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবুবাকার এম টাম্বাদু জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন পড়েন। সেই প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে কীভাবে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে ও ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে প্রতিবেশী বাংলাদেশের দিকে চলে যেতে বাধ্য করেছে। তদন্তকারীরা এই সহিংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা নির্যাতন-নিপীড়নকে যুক্তরাষ্ট্র জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলেছে। অবশ্য, মিয়ানমার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছিল।

সোমবার আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া। দেশটির প্রত্যাশা এর ফলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি চাপ তৈরি হবে।

এক বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলিরা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন। আইসিসি অবশ্য যুদ্ধাপরাধ নিয়েই বেশি কাজ করে। তবে মিয়ানমারের ক্ষেত্রে কোনও জুরিসডিকশন নেই আইসিসি’র। কেননা, মিয়ানমার এই আদালতের সদস্যরাষ্ট্র নয়। তাই আইসিসি’র প্রচেষ্টা বেশিদূর আগাতে পারেনি।

কিন্তু আইসিজে’র ক্ষেত্রে সেই সীমাবদ্ধতা নেই। গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রবিধি মোতাবেক কোনো বিবাদের ক্ষেত্রে আইসিজে রায় দিতে পারে। এই প্রবিধিতে মিয়ানমার ও গাম্বিয়া উভয়ই স্বাক্ষর করেছে।

তবে এ ধরণের আইনি তৎপরতা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে। খরচ হয় কয়েক মিলিয়ন ডলার। গাম্বিয়ার মতো ছোট্ট দেশের ক্ষেত্রে এই বিপুল অর্থ খরচ করাটা কঠিন। দেশটির অর্থনীতির আকার মাত্র ১৪৮ কোটি ডলার।

তবে গাম্বিয়ার সহায়তায় এগিয়ে এসেছে অন্যান্য দেশ। ২০ লাখ জনসংখ্যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়াকে সহায়তা দেবে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি। এছাড়া সহায়তা দেবে মার্কিন আইনি প্রতিষ্ঠান ফোলে হোগ

গাম্বিয়ার নিজেরও আছে এক সহিংস অতীত। ২০১৭ সালে পার্শ্ববর্তী ইকুয়েটোরিয়াল গায়ানায় পালিয়ে যাওয়ার আগে ২২ বছর দেশটি শাসন করেছেন ইয়াহহিয়া জাম্মে। এই একনায়কের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারও শুরু হয়েছে দেশটিতে। ৭০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে জাম্মের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।