বান্দরবান প্রতিনিধি •
বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে একদিকে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যেমন চলছে উৎসাহ-উদ্দীপনা অন্যদিকে নেতৃত্বের পরিবর্তন নিয়ে জল্পনা-কল্পনারও কমতি নেই। কে আসছেন নেতৃত্বে তাই এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে।
মেয়াদপূর্তির দীর্ঘ ৬বছর পর আজ সোমবার শহরের রাজার মাঠে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে পুরো শহরে এখন উৎসবের আমেজ। রাস্তাঘাট ব্রিজ সাজানো হয়েছে রং বে রঙের ব্যানার ফেস্টুন প্লেকার্ড দিয়ে। কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানাতে তৈরি করা হয়েছে ২২টি তোরণ। সমাবেশস্থল রাজার মাঠে বিশাল নৌকা আকৃতির মঞ্চ। শহরজুড়ে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। উদ্বোধক থাকবেন আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ এমপি, প্রধান বক্তা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম এবং বিশেষ অতিথি আ.লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ এমপি, প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার
বিপ্লব বড়য়া, আ.লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এদিকে সম্মেলনের মাধ্যমে কারা নেতৃত্বে আছেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এবার সম্মেলনটি অন্যান্য বারের চাইতে ব্যতিক্রম। অপেক্ষাকৃত তরুণ ও ত্যাগী নেতা কর্মীদের নেতৃত্বের জন্য বাছাই করে নেয়া হবে কমিটিতে। এর আগের কমিটিতে ত্যাগী এবং তরুণ নেতাদের নেয়া হয়েছিল। তবে নতুন কমিটিতে এ সংখ্যা বাড়বে বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। অভিজ্ঞরা মনে করছেন, পাহাড়ে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এখন নানামুখী সংকটে রয়েছে।
বিশেষ করে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতি ও অন্যান্য পাহাড়ি সংগঠনের সাথে বিরোধের জের ধরে আধিপত্যের লড়াই, নেতৃত্বের সংকট ও জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়াসহ বিভিন্ন সংকটের কথা জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। এসব বিষয়কে সামনে রেখে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে সম্মেলনের মাধ্যমে শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে বলে অভিজ্ঞরা মনে করছেন। এদিকে রবিবার সকাল থেকে সম্মেলনে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদে ৭টি ফরম বিক্রয়ের কথা জানান সম্মেলন নির্বাচন কমিটির সদস্য। এদের মধ্যে সভাপতি পদে ফরম জমা দিয়েছেন জেলা আ.লীগের বর্তমান সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে দলের সহ সভাপতি পৌর মেয়র মো. ইসলাম বেবী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের সদস্য লক্ষ্মী পদ দাশ, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক জেলা পরিষদের সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর অজিত কান্তি দাশ,প্রচার সম্পাদক সাদেক হোসেন চৌধুরী ও সদস্য পৌর কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান খোকন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। নেতাকর্মীরা বলছেন সভাপতি প্রার্থী ক্যশৈহ্লা পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরের নিকটাত্মীয় হওয়ায় পদটি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। সম্মেলন নির্বাচন কমিটির আহবায়ক বীর বাহাদুর এমপির উদ্ধৃতি দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মংনুচিং মারমা সাংবাদিকদের বলেছেন কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। সে লক্ষে সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রার্থীরা ফরমও জমা দিয়েছেন। তাই এখন পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবে।
যদি অন্য কোন সিদ্ধান্ত না আসে তবে ১৫৬ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করবে। এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ৬ জন ফরম জমা দিলেও মূলত মোহাম্মদ ইসলাম বেবি, লক্ষ্মি পদ দাশ ও মোজাম্মেল হক বাহাদুর এই তিনজনের নাম উঠে আসছে। সাধারণ সম্পাদক পদে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি আগামী উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান বজায় রাখতেও কৌশল নিচ্ছে এসব নেতারা।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৩সালের ১১সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল হয়েছিল। ওই কমিটির নির্বাচিত সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গাকে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে ২০১৪সালে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে ২০১৫সালে একই অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিল সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমানকে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-