কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন

রোহিঙ্গা শিবিরে নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে

শফিক আজাদ, উখিয়া ◑

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন নিয়ে জমজমাট প্রচারণা চলছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো রোহিঙ্গা শিবিরে উত্তেজনাও বিরাজ করছে।

এ নির্বাচনে রোহিঙ্গা ‘জঙ্গিবাদী গ্রুপ’ হিসাবে পরিচিত বিদ্রোহী সংগঠন ‘আল ইয়াকিন’ গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রার্থী হওয়ায় দেখা দিয়েছে এ উত্তেজনা। অভিযোগ উঠেছে, এ নির্বাচনে কৌশলে আল ইয়াকিন তাদেরকে বিজয় করতে কালো টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিদ্রোহী গ্রুপ এর বিপক্ষে রয়েছেন ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারা।

অভিযোগ উঠেছে, পাকিস্তানী জঙ্গি গোষ্ঠির অর্থায়নে আল ইয়াকিন গ্রুপের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ক্যাম্পের আনাচে-কানাচে ছেয়ে গেছে রঙ-বেরঙের ব্যানার-পোস্টারে। যার ফলে এ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। ক্যাম্প জুড়ে বিরাজ করছে এক অস্বস্থিকর পরিস্থিতি। অপরদিকে আল ইয়াকিন গ্রুপের বিপরীতে নিরবে প্রচারণা চালাচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সমর্থিত প্রার্থীরা।

জানা গেছে, নিবন্ধিত ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন আজ সোমবার থেকে শুরু হয়ে ২৮ নভেম্বর ৩ দিন ব্যাপী অনুষ্টিত হবে। নিবন্ধিত ক্যাম্পের ৭টি ব্লকে (ওয়ার্ডে) এই নির্বাচনে শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা না গেলেও প্রতিপক্ষ ওই গ্রুপের মধ্যে এই আমেজ পরিলক্ষিত করা গেছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা ভয়ে এ নিয়ে মন্তব্য করতেও নারাজ।

নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আল ইয়াকিন এর রয়েছে মূখ্য ভূমিকা। তাই তাদের ব্যাপারে কেউ বিরূপ মন্তব্য করলে খুন অথবা গুম হওয়ার আশংকা থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে কতিপয় সংগঠনের নেতারা তাদের মনোনীত প্রার্থীদের বিজয় করে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কুতুপালং জি-ব্লকের হাফেজ জালাল, এফ-ব্লকের মাস্টার গণি, ডি-ব্লকের মোঃ ইউনুছ। এসব বিতর্কিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে বলে সাধারণ রোহিঙ্গারা দাবী করেন।

নানা সুত্রের অভিযোগঃ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্করে-ই-তৈয়বা’র অর্থায়ন রয়েছে। নানা এনজিও’র মাধ্যমে অত্যন্ত গোপনে সংগটনটি বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্টা করে আলোচনায় চলে আসেন জি-ব্লক থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হাফেজ জালাল নামের একজন বিতর্কিত রোহিঙ্গা নেতা। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিতর্কিত রোহিঙ্গা হাফেজ জালাল কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের ডিমান্ড মাঠ সংলগ্ন একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্টা করে সেখানে কৌশলে কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।
সাধারণ রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, হাফেজ জালাল ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে পুরো নিবন্ধিত ক্যাম্পের কর্তৃত্ব বিদ্রোহী সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে চলে যাবে বলে আশংকা রয়েছে। তাই এসব বিতর্কিত ব্যক্তিেেদর নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবী জানিয়ে আসছিলেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। তারা আরো জানান, বিভিন্ন সংগঠনের অর্থে ব্যানার-পোস্টার টাঙ্গিয়েছে ক্যাম্পের অলিতে-গলিতে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পে চরম উত্তেজনার পাশাপাশি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংকা তাদের।

তবে রোহিঙ্গা নেতা হাফেজ জালাল তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আল ইয়াকিন এর সাথে তার নুন্যতম সম্পকর্ও নেই। এরকম অপপ্রচার করেই প্রতিপক্ষ তাকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছেন বলে তার দাবি।

এ সব বিষয় নিয়ে কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিআইসি) খলিলুর রহমান খাঁন বলেন, অনেকে এই কথা মুখে বললেও কেউ লিখিত অভিযোগ করেন না। যদি এ ধরনের লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।