হংকংয়ের নির্বাচনে বিক্ষোভকারীদের নজিরবিহীন বিজয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ◑  চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের স্থানীয় নির্বাচনে নজিরবিহীন সফলতা পেয়েছে সেখানকার চীন বিরোধী গণতান্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীরা। নির্বাচনের এই ফলাফলকে চলমান বিক্ষোভের প্রতি স্থানীয় জনগণের সমর্থন হিসাবেই দেখা হচ্ছে।

বিবিসি জানিয়েছে, প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, নগরীর ৪৫২টি স্থানীয় পরিষদ আসনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৮৫টিতে জয় পেয়েছেন গণতন্ত্রপন্থি প্রার্থীরা। অন্যদিকে মাত্র ৫৮টিতে জয় পেয়েছে বেইজিংপন্থি প্রার্থীরা। গত ৪ বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থিরা মাত্র ১শ আসন পেয়েছিলেন।

গত ছয় মাস ধরে চলা বিক্ষোভের কারণে ভোট গ্রহণে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার অথবা ভোট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও রোববারের নির্বাচন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। এতে বিপুল সংখ্যক ভোটার স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দেন।

প্রায় ৭৪ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৪১ লাখ লোক ভোটার হিসেবে নিজদের নাম তালিকাভুক্ত করেন। এর মধ্যে ২৯ লাখেরও বেশি লোক ভোট দেয়। ফলে এবারের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক (৭১ শতাংশ) ভোট পড়ে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার ছিল ৪৭ শতাংশ থেকে অল্প বেশি।

গত ছয় মাস ধরে চলা অস্থিরতার ধারাবাহিকতায় ভোট গ্রহণে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার অথবা ভোট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও রোববার তেমন কিছু ঘটেনি, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটের দিনটি পার হয়।

দিনের পর দিন ধরে চলা অস্থিরতা, সরকারবিরোধী প্রতিবাদ ও সংঘর্ষের পর এই নির্বাচনকে সরকারের পক্ষে হংকংবাসীদের সমর্থনের একটি পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল।

হংকং সরকার ও বেইজিংয়ের ধারণা ছিল, এই নির্বাচন তাদের প্রতি তথাকথিত ‘নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ’ ভোটারদের সমর্থনকে তুলে ধরবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তার বদলে বেইজিংপন্থি উল্লেখযোগ্য কিছু প্রার্থীও তাদের আসন হারিয়েছেন। আসন হারানো এসব প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্কিত বেইজিংপন্থি জুনিয়াস হো বলেছেন, ‘স্বর্গ-মর্ত্য ওলটপালট হয়ে গেছে।’

হংকংয়ের স্থানীয় পরিষদের কাউন্সিলরদের রাজনৈতিক ক্ষমতা সীমিত। তাদের প্রধানত বাস রুট, আবর্জনা পরিষ্কার ইত্যাদি স্থানীয় ইস্যু নিয়েই কাজ করতে হয়। তাই স্বাভাবিক সময়ে স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এখানে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। কিন্তু এবার পরিস্থিতি পুরো বিপরীত ছিল। টানা সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর প্রথমবারের মতো ভোটের মাধ্যমে নিজেদের মনোভাব তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিল হংকংবাসী, যা তারা পুরোপুরি কাজে লাগায়।

গত কয়েক মাসের মধ্যে রোববারই ছিল প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন, যে দিনটিতে হংকংয়ে কোনো সংঘাত বা সহিংসতা দেখা যায়নি। ভোটের পর হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বলেন, “অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখে, আমি সন্তুষ্টির সঙ্গে জানাচ্ছি, আজকের নির্বাচনের দিনটিতে আমরা তুলনামূলকভাবে শান্ত ও শান্তির পরিবেশে ছিলাম।”