উখিয়ায় গরিবের বরাদ্দ পাচ্ছে সচ্ছলরা

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া ◑

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ‘জমি আছে, ঘর নেই’ কর্মসূচিতে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পালংখালী গ্রামে ঘর পাওয়া উপযোগী অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘর নির্মাণেও উঠেছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। উপকারভোগীদের অভিযোগ, যে ঘর পাওয়া গেছে তা বসবাসের উপযোগী নয়, নিমœমানের দ্রব্য ব্যবহার করা হয়েছে নির্মাণে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ অনুযায়ী ব্যয় করা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘর পেয়েছেন পশ্চিম পালংখালী গ্রামের কবির আহামদ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা এমন ঘর চাইনি। এটি কী ঘর হলো। আম কাঠ দিয়ে বানানো হয়েছে দরজা ও জানালার পাল্লা। ১৫-২০ দিন হলো ঘর করে দিয়েছে, অথচ এখনো তা ব্যবহারযোগ্য না। আর ঘরে যে বেড়া দিয়েছে তা ভেতর-বাইরের সব দেখা যায়। ’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের এই ঘর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সুইস রেডক্রসের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) পপুলেশন ম্যানেজমেন্ট অপারেশন (পিএমও) প্রোগ্রাম। ‘জমি আছে, ঘর নেই’ কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের বিনামূল্যে ঘর দেওয়ার কথা। উপকারভোগী মনোনয়নে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বা মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা।

নির্দেশনা অনুযায়ী যাদের ন্যূনতম বা ৫ শতাংশ জমি রয়েছে, অথচ ঘর নেই, তাদের ঘর দেওয়ার কথা। এ ড়্গেত্রে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের সুপারিশপত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, উল্লিখিত কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে বিডিআরসিএসের পিএমও কর্মীরা সরকারি রক্ষিত বনভূমিতে ঘর করছে। ইচ্ছামতো ঘর বানিয়ে দিচ্ছে। এ ড়্গেত্রে যারা ঘর পাওয়ার উপযোগী তাদের অনেকে বঞ্চিত হয়েছে।
পশ্চিম পালংখালী গ্রামের মৃত কবির আহামদের ছেলে হারুন রশীদ (৩৫) স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও বিধবা মাকে নিয়ে পৈতৃক ১২ শতাংশ জমিতে সরকারি টিনের বেড়া ও পলিথিনের ছাউনিতে কষ্টে জীবন কাটালেও একটি ত্রাণের ঘরও পাননি। তবে একই এলাকায় কয়েকটি সচ্ছল পরিবারকে করে দেওয়া হয়েছে ঘর।
পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মঞ্জুর এসব ঘরের মান নিয়ে ও উপকারভোগী নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কারা কাকে কোন ধরনের ঘর দিচ্ছে, সে সম্পর্কে কিছুই জানি না। এসব ঘর দেওয়া ও নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ’

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এ ইউনিয়ন।

বিডিআরসিএসের লোকজন আমার ইউনিয়নে ৪৪০টি ঘর বানিয়ে দেবে বলে জানিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী আমি কিছু তালিকাও দিয়েছিলাম। পরে মাত্র ২২৫টি ঘর দিয়ে বাকি ঘরগুলো ১০-১৫ কিমি দূরে হলদিয়াপালং ও রত্নাপালং ইউনিয়নে দেওয়া হচ্ছে। এটা অনিয়ম ও দুর্নীতি। ’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিডিআরসিএসের পিএমও প্রোগ্রামের কক্সবাজার প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. জয়নাল বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে শেল্টার কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সিনিয়র শেল্টার অফিসার কামরুল হাসান নিমœমানের ঘর নির্মাণ, উপকারভোগী নির্বাচনসহ সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্প কাজ চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন। তিনি জানান, নির্দেশনা অনুসরণ করে যাদের নিজস্ব খতিয়ানের জমি রয়েছে, তাদেরই শুধু ঘর দেওয়া হচ্ছে। পালংখালী ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দকৃত ৪৪০টি ঘরের মধ্যে ২২৫টি পালংখালী ইউনিয়নে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১২৫টি হলদিয়াপালং ও ৭৫টি রত্নাপালং ইউনিয়নে উখিয়া ইউএনওর পরামর্শে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ঘরের ব্যয় বরাদ্দ ৬০-৬৫ হাজার টাকা বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ঘর দেওয়ার আগে বিডিআরসিএসের লোকদের বলেছিলাম কীভাবে উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়েছে, কারা উপকারভোগী, কী ধরনের ঘর হবে, ব্যয়ের পরিমাণ বরাদ্দ কত ইত্যাদি বিষয় জানাতে, তবে তারা তা জানায়নি।

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ‘জমি আছে, ঘর নেই’ কর্মসূচির নীতিমালা অনুসরণের জন্য বলা হলেও তারা তা মানেনি। ’ তিনি আরও বলেন, ‘পালংখালী ইউনিয়নে সরকারি জবর-দখলকৃত বনভূমিতে বেশ কয়েকটি ঘর দেওয়ায় সেখান থেকে কিছু ঘর অন্য ইউনিয়নে দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঘরগুলো নিয়েও একই অভিযোগ আসছে। তবে প্রতিটি ঘরের বরাদ্দ ব্যয় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা হবে। ’

উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, বিডিআরসিএসের ঘর নির্মাণ ও অনিয়মের বেশ লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।

তবে কারা, কার মাধ্যমে, কীভাবে ঘরগুলো নির্মাণ করছে, সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তা ছাড়া একজনের খতিয়ানভুক্ত জমিতে আরেকজনকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া বেআইনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ’