অবশেষে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানালো ইসরায়েল

রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মামলার মুখে পড়ার পরও মিয়ানমারের নেতৃত্বের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন দেখিয়েছিলেন ইসরায়েলি দূত। তবে ওই অবস্থান থেকে সরে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত নৃশংসতার নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সপ্তাহখানেক আগেও ওই নৃশংসতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে আনা এক প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে তারা।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ মামলা করে গাম্বিয়া। আগামী ১০-১২ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজে’তে মামলাটির প্রকাশ্য শুনানি শুরু হবে।

বুধবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানায়, নেপিদোয় নিযুক্ত ইসরায়েলি দূত রনেন গিলর মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি’র প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন ঘোষণা করেছেন। এক টুইট বার্তায় আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় শুভকামনা জানিয়েছেন ওই কূটনীতিক। তিনি লিখেছেন, ‘ভালো সিদ্ধান্তের আশা করছি আর শুভ কামনা’। হারেৎজের খবর প্রকাশের পর ওই টুইটটি মুছে ফেলা হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভুল করে লিখে ফেলা ওই টুইটটি তাৎক্ষণিক ঠিক করে নেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নৃশংসতা ঘটেছে তার কঠোর নিন্দা জানায় ইসরায়েল।

রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের কারণে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময়েও নেপিদোর কাছে অস্ত্র বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছিল ইসরায়েল। এ খবর প্রকাশের পর দেশটির উচ্চ আদালতে পিটিশন দায়ের করেন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী ইতাই ম্যাক। তখন থেকেই মিয়ানমারের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

ইসরায়েলি দূতের টুইট বার্তার খবর সামনে আসার পর বৃহস্পতিবার ইতাই ম্যাক বলেন, ‘আমি এটি ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি। ইসরায়েল রুয়ান্ডার শাসক, গুয়েতেমলার সেনাবাহিনী, বসনিয়া যুদ্ধে সার্বিয় শাসকদের সমর্থন করেছে। টুইটটি তারই ধারাবাহিকতা। এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে বিষয়গুলো বেশি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে আর রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিরা যা বলছেন তা মুছে ফেলতে পারছেন না’।

২০১৭ সালে ইতাই ম্যাকের দায়ের করা পিটিশনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্ত গোপন রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অনুরোধে সাড়া দিয়ে বিচারপতি ইয়োরাম ড্যানিগার, অ্যানাট ব্যারোন ও ডেভিড মিন্টজ রায় গোপন রাখার সিদ্ধান্ত দেন। এরপর থেকে ইসরায়েল দাবি করে আসছে, মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত রেখেছে তারা। তবে পরে ইসরায়েলের এক অস্ত্র মেলায় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি দেখতে পায় হারেৎজ। ওই সময় ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করে, এই ধরনের মেলায় তাদের উপস্থিতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এছাড়া ২০১৮ সালের মে মাসে হারেৎজের এক খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের সঙ্গে শিক্ষা সহায়তার এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইসরায়েল। চুক্তি অনুযায়ী, হলোকাস্ট ও বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ে পাঠ্যসূচি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। ওই খবর প্রকাশের পর আবারও উচ্চ আদালতে পিটিশন দায়ের করেন ইতাই ম্যাক। সম্প্রতি ইসরায়েল সরকার দাবি করেছে, মিয়ানমারের সঙ্গে শিক্ষা সহায়তার ওই চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে না।