মরণব্যাধি এইডসের ভয়াবহ ঝুঁকিতে কক্সবাজার

হুমায়ুন কবির জুশান ◑


সৌদি আরবে এক সড়ক দুর্রঘটনায় আমার জীবনে এক কালো অধ্যায় নেমে আসে। দুর্রঘটনার পর শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তখন অনেক রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই সময়ে বহু লোক আমাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে তোলেন। কিন্তু এখন বেঁচে থেকেও মৃত। শুধু আমার একার নয়, পরিবারের তিনজনই এখন এইচআইভি পজেটিভে আক্রান্ত।

তিনি জানান,প্রথমে আমার শরীরে এই রোগ ধরা পড়ে। মনে হচ্ছে- রক্ত থেকেই আমার শরীরে এইচআইভি পজেটিভ বাসা বেঁধেছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে আমার স্ত্রী এবং একমাত্র কন্যাসন্তানও এই রোগে আক্রান্ত। কথাগুলো বলছিলেন উখিয়ার টাইপালং এলাকার এক ব্যক্তি। বিদেশ থেকে ফিরে বর্তমানে তিনি ঢাকায় এই রোগের সেবা নিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেক যুবতী এইচআইভি পজেটিভ আক্রান্ত। দেশি-বিদেশি হাজার হাজার লোক রোহিঙ্গাদের সেবা দিচ্ছে। তাছাড়া পর্রযটন নগরী কক্সবাজারে বিদেশিদের আনা গোনা এমনিতেই সরগরম থাকে। পুরনো রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে কক্সবাজার,চট্রগ্রাম ও ঢাকাতে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে এক রোহিঙ্গা নারীর সাথে পরিচয় ঘটে চট্রগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার এক যুবকের সাথে।

তিনি নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমার সাথে রোহিঙ্গা তরুণীর দৈহিক মিলন ঘটে। বছরের পর বছর তার সাথে সময় কাটিয়েছি। এখন আমার শরীরে এইচআইভি পজেটিভ ধরা পড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ডাক্তাররাও এই রোগকে ভয় পান। হাসপাতাল থেকে তাড়িয়ে দেন। কারো কাছে প্রকাশ করতে পারি না। মনে অনেক কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি। পরিবারের সঙ্গে থাকলেও আত্নীয় স্বজনদের বলতে পারছি না। জীবিত থেকেও মৃত।

তার ধারণা রোহিঙ্গা তরুণী থেকে তার এই রোগ হয়েছে। এইডস নিয়ে কাজ করা সামাজিক সংগঠনের এক নেতা জানান, আমরা কক্সবাজার বাসী এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। যারা এইচআইভি পজেটিভ বহন করছেন, তাদের টেককেয়ার করতে হবে। না হলে তারা অন্ধকারে চলে যাবেন। এ মারাত্মক রোগের ভাইরাস ছড়াবেন। তিনি আরো বলেন সরকারকে এনজিওদের নিয়ে আরো সচেতনতামূলক কাজ করতে হবে। রোহিঙ্গা ও বিদেশিদের কারণে কক্সবাজারে এইডস ঝুঁকি বাড়ছে।

ডাক্তার মোহাম্মদ আয়াছ বলেন, এইচআইভি ভাইরাস মানুষের শরীরে সংক্রমণ হলেই রোগ হয়ে যায় না। সংক্রমণ হয়ে রোগ হতে অনেক বছর লাগে। ১০ থেকে ১৫ বছর বা ২০ বছর পর এই রোগ হয়। এই এইচআইভি ইনফেকশনের কারণে যখন কতগুলো লক্ষণ শরীরের মধে দেখা দিতে শুরু করে-সেটা জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, ডায়রিয়া হওয়া, টিবি রোগ হওয়া,। এইচআইভির কারণে যখন মানুষের মধ্যে এই রোগ গুলো দেখা দেয়, তখন একে এইডস বলে।

একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের শরীরে এইচআইভি তিনটি পদ্ধতিতে ছড়ায়, একটি হলো, দুইজন মানুষের শারীরিক মিলনের মাধ্যমে। দ্বিতীয়টি ইনজেকশনের মাধ্যমে হতে পারে, ইনজেকশন যদি শেয়ার করে বা রক্ত দেয়ার মাধ্যমে হতে পারে, তিন নম্বর হচ্ছে, মায়ের থেকে সন্তানের হতে পারে। তাও এর সম্ভাবনা খুব কম।১০০ ভাগের এক ভাগও নয়, দশমিক পাঁচ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। দশমিক পাঁচ শতাংশের মধ্যে পড়ে গেলে সন্তানেরও এইচআ‌ইভি পজিটিভ হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারে সমকামীদের মধ্যে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ার হার বেশি বলে তিনি জানিয়েছেন।