১০০ ফুট ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধুর জীবনী

দেশবরেণ্য ১০০ চিত্রশিল্পী মিলে ১০০ ফুট ক্যানভাসে এঁকেছেন বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে ছবি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রোববার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে তারা এ ছবি আঁকেন। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের পাবলিক প্লাজায় ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই থেকে এসব ছবি আঁকা হয়। তাদের রংতুলির আঁচড়ে উঠে আসে ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১ ও ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জীবনী।

চিত্রশিল্পী জামাল উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল মান্নান, জাহিদ মোস্তফা, আফরোজা জামিল কংকা, কীরিটী রঞ্জন বিশ্বাস, দুলাল চন্দ্র গাইন, নাসিম আহমেদ নাদভী, সন্‌জিব দাস অপু, শহীদ কবির, নাজমা আক্তার, কামাল পাশা, আলম আনসারীসহ দেশের খ্যাতনামা ১০০ জন চিত্রশিল্পী সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রংতুলি আর মনের মাধুরী মিশিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকায় অংশ নেন। ক্যানভাসে যেন তারা আবার জীবন্ত করে তোলেন প্রিয় নেতাকে।

এর আগে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর নেতৃত্বে চিত্রশিল্পীরা টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তারা বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত করেন। এ সময় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, জেলা কালচারাল অফিসার আল মামুন বিন সালেহ উপস্থিত ছিলেন।

চিত্রশিল্পী জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর রচিত দুটি বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা থেকে ছবি এঁকেছি। এ ছবি আগামী বছর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশে প্রদর্শন করা হবে। এ ছবি দেখেই দর্শনার্থীরা বঙ্গবন্ধুর বই দুটি পড়তে আগ্রহী হবেন। এ দুটি বই তিনি শেষ করেননি। কিন্তু আমরা ছবি এঁকে ওই দুটি বইয়ের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চেষ্টা করেছি।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে শিল্পকলা একাডেমি বঙ্গবন্ধুর ওপর বৃহৎ চিত্রকর্ম করছে। চিত্রশিল্পীরা বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, আদর্শ, দর্শন ও ত্যাগ রংতুলির মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। এটি আমরা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানাতে এ চিত্রকর্ম অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে শতকোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেতনা নিয়েই আমরা কাজ করছি। ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ ও বঙ্গবন্ধুকে আরও বেশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।

শতাব্দীর মহানায়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান :শনিবার রাতে গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্মৃতি অডিটোরিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘শতাব্দীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চকুঁড়ি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মঞ্চকুঁড়ির শিশুদের ব্যাজ পরিয়ে দেন লিয়াকত আলী লাকী ও শাহিদা সুলতানা। পরে শিশুরা মঞ্চকুঁড়ির থিমসংয়ের সঙ্গে নেচে-গেয়ে বেলুন উড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করে।

এরপর শুরু হয় শতাব্দীর মহানায়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গোপালগঞ্জ ও ঢাকা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তির মধ্য দিয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবহমান বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতি, বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে তুলে ধরা হয়।

স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী গাজী মুস্তাফিজুর রহমান দিপু বলেন, গোপালগঞ্জ ও ঢাকা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা মানসম্পন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছেন। ঢাকা শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, বাউল, নৃত্য ও অ্যাক্রোবেটিক দল উপস্থিত দর্শকদের নির্মল আনন্দ দিয়েছে।