উত্তেজনা বিরাজ

উখিয়ায় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হামলা ও গাড়ি ভাংচুর: আহত ৫ 

ফারুক আহমদ, উখিয়া ◑


উখিয়ায় যাত্রীবাহী পরিবহনে যাত্রী ওঠানামা ও আধিপত্যকে কেন্দ্র করে ড্রাইভারকে মারধর, গাড়ি ভাঙচুর ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

সন্ত্রাসী ও লাঠিয়াল বাহিনীর হামলায় পালং স্পেশাল পরিবহন সার্ভিসের দুটি গাড়ি ভাংচুরসহ ৫জন ড্রাইভার আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) কয়েক দফা সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মালিক ড্রাইভার ও শ্রমিকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উখিয়া স্টেশনে দফায় দফায় ড্রাইভার হেলপারদের মারধর, গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি ও টাকা ছিনতাই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। উখিয়া স্টেশনে যাত্রী নিয়ে গেলেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা গাড়ি হতে  ড্রাইভারদেরকে জিম্মি করে নামিয়ে ফেলে। বিষয়টি তিনি উখিয়া থানা অফিসার ইনচার্জকে জানিয়েছেন বলে জানান।

জানা যায়, উখিয়া হতে সীলাইন ও কক্সলাইন নামক দুইটি পরিবহন চালু রয়েছে। এদিকে যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধার লক্ষ্যে কোটবাজার স্টেশন হতে অতিসম্প্রতি পালং স্পেশাল সার্ভিস নামের আরও একটি নতুন পরিবহন যাত্রী সেবা শুরু করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বর্তমানে তিনটি যাত্রীবাহী পরিবহন সংস্থা উখিয়া ও কোটবাজার হতে কক্সবাজারে যাত্রী পরিবহনকে কেন্দ্র করে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। গত দুদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উখিয়া স্টেশনে অন্তত পাঁচ দফা ঘটনা সংঘটিত হয়। পালং স্পেশাল সার্ভিসের গাড়ি যাত্রী নিয়ে উখিয়া স্টেশনে গেলেই ড্রাইভারদেরকে মারধর যাত্রীদের নাজেহাল ও গাড়ি ভাংচুর করা হয়।

পালং স্পেশাল সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম অভিযোগ করে বলেন, আজ সোমবার রাত ৮ টায় কক্সবাজার (জ ১১০৩৪২) নম্বরের গাড়িটি  যাত্রী নামিয়ে দিতে উখিয়ায় গেলে সন্ত্রাসীরা ড্রাইভার মনসুর আলমকে মারধর ও গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। এ সময় তার নিকট হতে টাকা ছিনিয়ে নেয়। আহত মনসুরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, কক্সলাইন ও সীলাইন পরিচালক নূর মোহাম্মদ বাদশার নেতৃত্বে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী ও লাঠিয়াল বাহিনী সকালে উখিয়া স্টেশনে স্পেশাল সার্ভিসের কক্সবাজার (জ ১১০৩৪৭) নম্বরের গাড়ির ড্রাইভার টিপু বড়ুয়াকে মারধর ও গাড়িতে লাথি দিয়ে আঘাত করে।

এছাড়াও দুপুরে কক্সবাজার (জ ১১০৩৪৬) নম্বর  গাড়ির ড্রাইভার মোহাম্মদ হোসেনকে অনুরূপভাবে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করা হয় এবং যাত্রীদের কে নাজেহাল করে। দুপুরে কক্সবাজার (জ ০১১১১৩) নম্বর গাড়ির ড্রাইভার কামালকে মারধর করে। এদিকে গত রবিবার রাতে কক্সবাজার (জ ১১০১৩১) নম্বর গাড়ির ড্রাইভার নিজামুদ্দিনকে মারধর ও ধাওয়া করেছে।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মেম্বার স্বপন শর্মা রনি সাংবাদিকদের বলেন, পালং স্পেশাল সার্ভিস লিমিটেডের যাত্রীবাহী কোন পরিবহন কক্সবাজার থেকে যাত্রী নিয়ে উখিয়ায় নামিয়ে দিতে গেলেই নূর মোহাম্মদ বাদশার নেতৃত্বে একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী গাড়ি ভাঙচুর, ড্রাইভারকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকিসহ যাত্রীদেরকে নাজেহাল করছে। এমনকি গাড়ির ড্রাইভার হেলপার এর নিকট হতে টাকা পয়সা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়। সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে বলে পুণরায় এখানে আসলে গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে গত দুদিন পৃথক পৃথক ড্রাইভারদেরকে  মারধর, গাড়ি ভাঙচুর ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মালিক এবং  শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় ত্রিমুখী বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সচেতন যাত্রীরা।  যাত্রীগণ এ ব্যাপারে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

হলদিয়া পালং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মিন্টু বলেন, গাড়ি ভাংচুর ও ড্রাইভার হেলপারদের উপর হামলার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ব্যাপার, যা খুব নিন্দনীয়। এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে যা পরবর্তীতে আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম উখিয়া স্টেশনে যাত্রীবাহী পরিবহনের ড্রাইভার দের কে মারধর ও হুমকি-ধমকি বন্ধ সহ যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট দাবি জানিয়েছেন।