প্রতি এনআইডিতে রোহিঙ্গাদের খরচ হতো ৩০ হাজার টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংগ্রহ করতে পারত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। দালালদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এনআইডি সরবরাহ করত। ক্ষেত্রবিশেষে টাকার পরিমাণ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকাও লাগত। এনআইডি জালিয়াতি নিয়ে গঠিত ইসির তদন্ত কমিটিসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ কাজ দালালদের মাধ্যমে করত চক্রটি। এদিকে, রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতি ইস্যুতে নিরপরাধ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এজন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বদলি না করতে প্রতিদিন দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. আবদুল বাতেন ইত্তেফাককে বলেন, রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতি ইস্যুতে নির্বাচন কমিশন খুবই সিরিয়াস। রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য আইটি অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের নেতৃত্বে সাত সদস্যদের একটি এবং সরেজমিনে যাচাই-বাছাইকরণে আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তির ইস্যুতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে কমিশন।

তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালে ল্যাপটপ চুরি করে বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী রোহিঙ্গা ও বিদেশি নাগরিকদের এনআইডি সরবরাহ করে আসছিলেন। এছাড়া বেআইনিভাবে এনআইডি সংশোধনের কাজেও তারা জড়িত ছিলেন। ফাঁদ ফেলে সেই চক্রটিকে শনাক্ত করে ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জনকে পুলিশে সোপর্দ করেছে ইসি। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার পাশপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থাও নিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর নির্বাচন কমিশনের বিশেষ তদন্ত কমিটি যে তথ্য পেয়েছে, তাতে শুক্রবার ও শনিবার ভোটার করে নেওয়ার সরঞ্জাম (মডেম ও সিগনেচার প্যাড) বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এই অপকর্মটি করতেন কর্মচারীরা। অথচ মডেম থাকার কথা নিবন্ধন কর্মকর্তার কাছে ও তার অফিসে।

ইসিসংশ্লিষ্টরা বলেন, এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় এ পর্যন্ত ইসির সাবেক ১৩ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইসির নিজস্ব কর্মচারী রয়েছে চার জন। ইসির পক্ষ থেকে ডবলমুরিং এবং কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পৃথকভাবে দুইটি মামলা করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের বেশির ভাগই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে।

চট্টগ্রামে যেতে চান না কর্মকর্তারা : সহসাই কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এখন আর চট্টগ্রামে বদলি হতে চান না। কেননা ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান অবদি চট্টগ্রাম অঞ্চলে দায়িত্ব পালনরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার নামে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। জিজ্ঞাসাবাদে শত্রুতাবশত অপ্রয়োজনীয় নাম উল্লেখ করছেন বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

আরো দুইটি কমিটি : ইসির নির্দেশনানুসারে এনআইডি উইং-এর কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে তদন্ত হয়। সংশ্লিষ্ট তদন্ত টিম কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিষয়াদি আমলে নিয়ে রোহিঙ্গা ভোটার অন্তর্ভুক্তির সার্বিক বিষয়াদি তদন্ত ও পর্যালোচনাপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন ও তদন্তবিষয়ে সুপারিশমালা প্রদানের জন্য প্রশাসন ক্যাডার, বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, ইসি সচিবালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের সমন্বয়ে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সরেজমিনে তদন্তপূর্বক মতামত প্রদানের জন্য ইসি থেকে আট সদস্যের একটি কারিগরি কমিটি করা হয়েছে। গত রবিবার এই দুইটি কমিটি করা হয়। যদিও গত ৩১ অক্টোবর এনআইডি ডিজির নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আরো একটি কমিটি করা হয়।

বিদেশি নাগরিকদের ব্যাপারে সতর্ক ইসি : মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকরাই কেবল নয়, সব বিদেশি নিয়েই সতর্ক ইসি। সম্প্রতি ভারতের এনআরসি জটিলতায় দেশটির অনেক নাগরিক বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অনুপ্রবেশ করছে। এসব নিয়ে সজাগ রয়েছে কমিশন। ভারতের নাগরিকরা অতীতেও এদেশের ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়ার অপচেষ্টা করেছে। এছাড়া কেবল ভারত নয়, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ আফ্রিকান অনেক দেশের নাগরিকও বিভিন্ন সময় এ চেষ্টা করেছে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সংস্থা, কোম্পানিতে চাকরিরত রয়েছেন কয়েক লাখ বিদেশি। এছাড়া রয়েছেন অনেক ব্যবসায়ীও। এদের নিয়েও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ইসি। ইত্তেফাক