ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ, উচ্ছ্বাসিত জেলেরা

সুজাউদ্দিন রুবেল ◑
ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আর বড় বড় সামুদ্রিক মাছ সুরমা, রিটা ও টুনা। সাগরে জাল ফেলতেই ধরা পড়ছে এসব সামুদ্রিক মাছ। যা বিক্রির জন্য কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেটি ঘাটে ফিরছে জেলেরা। যখন ট্রলার থেকে দু’হাতে বিক্রির জন্য ঝুঁড়িতে রাখছে ইলিশ; তখন আনন্দে ঝলমল করছে কক্সবাজার উপকূলের জেলে আব্দুল হাই’র দু’চোখ। বুধবার দুপুরে এই দৃশ্যের দেখা মিলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেটিঘাটে।

এ সময় কথা হয় জেলে আব্দুল হাই এর সঙ্গে। তিনি বলেন, “গত কয়েকবছর ধরে সাগরে মাছের পরিমাণ তেমন ছিল না। সারাদিন সাগরে জাল ফেলেও মাছের দেখা মিল তো না। কিন্তু এখন সাগরে মাছের পরিমাণ বেড়েছে এবং সাইজেও অনেক বড়। সাগরে জাল ফেললেই ধরা পড়ছে ইলিশ, রুপচাঁদা, সুরমা, রিটা, টুনাসহ সামুদ্রিক মাছ। যা বিক্রি করে ভাল দাম পাচ্ছি। ফলে সাগরে মাছ দেখে আনন্দে চোখে জল চলে আসে।”

এফবি কোহিনুর; সাগরে মাছ শিকার শেষে ট্রলার ভর্তি মাছ নিয়ে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে ভিড়ল। আর ট্রলার থেকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পল্টনে বিক্রির জন্য ঝুঁড়িতে রাখা হচ্ছে ইলিশ। যা দেখে মুখে হাসি ওই ট্রলারের মাঝি আইয়ুব আলীর।

আইয়ুব আলী বলেন, “দশ দিনের জন্য সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছি। কিন্তু ৫ দিনের মধ্যে মাছে ট্রলার ভরে যাওয়া তা বিক্রির জন্য ফিশারী ঘাটে ফিরে এসেছি। এবার ১০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ মাছ পেয়েছি। যা শতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করছি। এখন খুবই ভাল লাগছে; যেন ৬৫ দিন, ২২ দিন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাগরে মাছ শিকারে যেতে না পারার কষ্ট ভুলে যাচ্ছি।”
সরজমিনে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সাগরে মাছ শিকার শেষে কক্সবাজার উপকূলে ফিরেছে জেলেরা। তাই ট্রলার থেকে মৎস্য অবতরণ ঘাটে মাছ নামাতে ব্যস্ত জেলে ও শ্রমিকরা।

মাছ ধরার ট্রলার এফবি রাশেদ এর মাঝি হুমায়ুন কবির বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে। সব ধরণের সামুদ্রিক মাছই জালে ধরা পড়বে। মনে হচ্ছে, সামনে সাগরে আরও বেশি মাছ পাওয়া যাবে।”

এফবি মরিয়ম ট্রলারের জেলে রশিদ বলেন, “অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর সাগরে মাছের অবস্থা ভালো। সাগরে যেভাবে মাছ পাচ্ছি, তাতে মনে হয় এবছর সাগরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে।”

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পল্টন; যেখানে সামুদ্রিক মাছে সয়লাব। তবে মাছের পরিমাণ বাড়ায় কমেছে সব ধরণের মাছের দাম।

মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এখন মাছের দাম অনেক কম। কারণ সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় সব ধরণের মাছের দাম নিম্নমুখী। এছাড়াও কক্সবাজারের বিভিন্ন মাছের প্রজেক্ট রয়েছে; এসব প্রজেক্ট থেকেও চিংড়ি, বাটা ও টেংরা মাছ বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। ফলে মাছের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।”

আরেক মৎস্য ব্যবসায়ী আখতার হোসেন বলেন, “গত সপ্তাহে সামুদ্রিক মাছের দাম যা ছিল এখন তাই রয়েছে। যেমন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ওজন অনুযায়ী ৩শ থেকে ১ হাজার, সুরমা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পোয়া মাছ ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, রিটা ও টুনা ৪০০ টাকা, আঁইশ চাঁদা মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ও রুঁপচাদা ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। ফলে মাছের দাম এখন স্বাভাবিক রয়েছে।”

এদিকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারে চাহিদার তুলনায় মাছের পরিমাণ বাড়ায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন জানান, সরকার ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর সাগরে মাছ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সামুদ্রিক মাছ কক্সবাজারের চাহিদা পূরণ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও কিছু কিছু মাছ দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হচ্ছে। যার ফলে সরকারি রাজস্ব আদায়ও বেড়ে চলেছে।

উল্লেখ্য, গত বছর কক্সবাজার থেকে ৭৫ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ দেশের বাইরে রপ্তানি করা হলেও এবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ মেট্রিক টনে।