রোহিঙ্গাদের সুশাসন নিশ্চিতে টিআইবি’র ১৩ দফা সুপারিশ

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবস্থানের সময়ে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য ১৩ দফা সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ধানমন্ডিতে অবস্থিত টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় এফডি-৭-এর আওতায় প্রকল্পগুলোকে বিশেষ ও জরুরি হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরুর অনুমতি ও ছাড়পত্র প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তে শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) মাধ্যমে করতে হবে;

ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় আরআরআরসি’র জনবল বাড়াতে হবে এবং প্রতিটি ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) আওতায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে;

প্রতিটি ক্যাম্পে রাতের বেলা ক্যাম্প ইনচার্জদের (সিআইসি) অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে;

সিআইসিদের মানবিক নীতিসমূহ মেনে চলার বাধ্যবাধকতাসহ এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে;

মানবিক সহায়তায় খাতভিত্তিক প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিতে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;

রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক ব্যয়সহ বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব নিরূপণ করে তা মোকাবিলায় কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং তার অর্থায়নসহ বাস্তবায়ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে হবে;

মানবিক সহায়তা প্রকল্প, অর্থ ব্যয়ের বিভিন্ন খাত, বাস্তবায়নের স্থান ও অগ্রগতি বিষয়ক তথ্য একটি সমন্বিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং তা হালনাগাদ করতে হবে;

কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতির যোগসাজশ নিয়ন্ত্রণে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে;

মানবিক সহায়তায় কার্যক্রম ও কর্মসূচি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অভিযোগ নিরসনে আরআরআরসি কার্যালয়ে কাঠামোবদ্ধ ‘অভিযোগ গ্রহণ ও নিরসন ব্যবস্থা’ চালু করতে হবে;

রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।

এসব সুপারিশ উপস্থাপনের সময় টিআইবির নির্বাহী প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের কোনও সমস্যা নয় বরং মিয়ানমারের সমস্যা। এ সমস্যা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দ্রুততম সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা সংস্থাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করার জন্য কূটননৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কূটনীতিতে কোনও ঘাটতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সামর্থ্যের মধ্যে যা যা করা সম্ভব তার সবটুকু বাংলাদেশ করছে। এখানে মিয়ানমারের শক্তি আমাদের চেয়ে বেশি। সে জন্য আমি এটিকে কূটনীতির ব্যর্থতা বলবো না; বরং এটি আমাদের কূটনীতির সীমাবদ্ধতা।’

রোহিঙ্গা সহায়তায় বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সহায়তা করার গোটা প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এবং অর্থ ব্যয়ের বিভিন্ন খাত, বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক তথ্য একটি সমন্বিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

এছাড়া যারা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার পরামর্শ দেন তিনি।
গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ওপর গবেষণা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয় এবং তার ওপর ভিত্তি করে এই রিপোর্ট দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।