নিজস্ব প্রতিবেদক ◑
রোহিঙ্গাদের গণহত্যা মামলার শুনানি নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর)।
এ উপলক্ষে সোমবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর মসজিদ ও মাদ্রাসায় ছোট পরিসরে দোয়া মাহফিল চলছে। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উখিয়ার কতুপালং, লম্বাশিয়া, সীমান্তের শূন্যরেখা, টেকনাফের শালবন, নয়াপাড়া, জামিদুরা, লেদাসহ বেশকিছু ক্যাম্পের মসজিদ, স্কুল ও মাদ্রাসায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে শত শত রোহিঙ্গা নাগরিক অংশ নিয়েছেন।’
এদিকে শুনানি উপলক্ষে ক্যাম্পে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) নামের একটি রোহিঙ্গা সংগঠন। তবে এসব কর্মসূচি পালনে তাদের অনুমতি দেয়নি সরকার। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়, জেলা পুলিশ ও রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) এর নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এআরএসপিএইচ এর এক নেতা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে রায় পাওয়ার জন্য এখানে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্মসূচি পালনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল করছি। আল্লাহ যেন রোহিঙ্গাদের বিচার পেতে সহাতায় করেন।’
তুমব্রু শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে আইসিজে আদালতে বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে সুবিচার পান সেজন্য এখন মসজিদে-মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল চলছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, যেন আত্মীয়-স্বজনদের হত্যার সুবিচার পাই।’
বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়েছেন। তবে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখছেন।’
জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইবাল হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল কিন্তু দেওয়া হয়নি। এ বিচার নিয়ে যাতে ক্যাম্পে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা সৃষ্টি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টরা সর্তক রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলাটি করে। গাম্বিয়াও গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর অল্প সময়ের মধ্যে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে এ দেশে অবস্থান করছিলেন আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের প্রায় ৩৪টি শিবিরে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-