ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হচ্ছে কক্সবাজারের রাজনীতি

সৈয়দুল কাদের •

ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কক্সবাজারের রাজনীতি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তৎপরতা বেড়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর।

দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা বিএনপি প্রথমে জেলা ও উপজেলা কেন্দ্রিক রাজনৈতিক তৎপরতা চালালেও এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে তৎপরতা শুরু করেছে। স¤প্রতি কেন্দ্র ঘোষিত বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ করেছে জেলা উপজেলা ও প্রতিটা ইউনিয়নে শান্তি সমাবেশ। এসব সমাবেশে নেতৃবৃন্দ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

বিগত সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কক্সবাজারে ব্যাপক সংঘাত এর সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি ও দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে গ্রেফতারের পর জামাত বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে জেলা-ব্যাপী যে তান্ডব চালায় এতে তিনজন নিহত হয়। এমন পরিস্থিতির যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে কঠোর নজর রাখছেন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ।

স¤প্রতি বিএনপির তৎপরতা দেখা গেলেও জামায়াতের তেমন কোন তৎপরতা নেই। তবে গোপনে তাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের রাজনীতি নির্ভর কোন দল নয়। আওয়ামী লীগ জনবান্ধব এবং উন্নয়নন্মুখী একটি রাজনৈতিক দল। যে দলের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা এসেছে, যে দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সাধারণ মানুষকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিয়ে যেকোন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য প্রশাসনকে সহযোগিতা করে মোকাবেলা করা হবে। আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আওয়ামীলীগকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে আওয়ামী লীগের।

জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, বিএনপির নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। বিএনপি জনগণের মেন্ডেট নিয়েই ক্ষমতায় যেতে চায়। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য বিএনপি কোনদিনও করেনি। আগামীতেও করবে না। সন্ত্রাস, গুম ও খুন কারা করে তা ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়েছে। যারা জনগণের উপর আস্থা রাখতে পারেনা তারাই সন্ত্রাস এবং বিনা ভোটে ক্ষমতায় আঁকড়ে ধরতে চায়। জনগণ এবার কোনভাবেই ছাড় দেবে না। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবে। অগণতান্ত্রিক শক্তিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায় না সাধারণ মানুষ।

এদিকে শুধু জেলা শহর নয়, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি’র রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। স¤প্রতি বিএনপির পদযাত্রা ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী হিসেবে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করেছে। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা কোন ধরনের সংঘাত নয় সুষ্ঠু এবং সুন্দর পরিবেশে পদযাত্রা করেছি। বর্তমান সরকারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির এবং সন্ত্রাসের বিবরণ জনগণের সামনে তুলে ধরেছি। এতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

কুতুবদিয়া বড়ঘোপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউ পি চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, সুন্দর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যার যার কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে বিএনপি যদি কোন ধরনের সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে আওয়ামী লীগ জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথেই তাদের মোকাবেলা করবে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল হাশেম বলেন, এখনও কক্সবাজারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। এখনো সবকিছু চলছে সহনশীলতার মধ্যে। বিশেষ করে কক্সবাজার সদরের পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত রয়েছে। কোন ধরনের সমস্যা এখনো সৃষ্টি হয়নি। বিএনপি প্রতিনিয়ত তাদের কর্মসূচি জেলা কার্যালয় কেন্দ্রিক পালন করে আসছে। এতে কোন সমস্যা হয়নি। আওয়ামী লীগ ও পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি সফলভাবে পালন করে আসছে। আশা করি দু’দল যদি সুন্দর মন নিয়ে কক্সবাজারের স্বার্থে কোন ধরনের সংঘাতে না জড়ায় এতে কক্সবাজারবাসীই উপকৃত হবে।