রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ পরিস্থিতি, ২ মাসে ৯ খুন!

আবদুল্লাহ আল আজিজ, কক্সবাজার জার্নাল :


কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একের পর এক হত্যাকাণ্ড, মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না।

পরিস্থিতি ক্রমে অবনতির দিকে যাওয়ায় শরণার্থীদের পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আশ্রয়শিবিরে কর্মরত এনজিও সংস্থার কর্মীরা এবং এতে করে ক্যাম্পগুলোর আশপাশের স্থানীয় নাগরিকরাও অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।

নানা কারণে রোহিঙ্গাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড দমাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হিমশিম খেতে হচ্ছে।

রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা সকাল-সন্ধ্যা ক্যাম্পে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে। গত দুই মাসে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ৪ নেতা, নারী সহ খুন হয়েছে ৯ জন। এর মধ্যে চলতি মাসেই ক্যাম্পে গুলিতে ও কুপিয়ে নারী সহ ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক পৃথক ঘটনায় দুই শিশু সহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৭ জন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্য মতে, গত দুই মাসে বিভিন্ন অপরাধে দুই জঙ্গি, কথিত আরসা সদস্য সহ ৩২ জনকে আটক করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সীমানা অংশের একটি ঝিরিতে কর্দমাক্ত এক ইমামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাত আটটার দিকে কয়েকজন সন্ত্রাসী মৌলভী শামসুল আলমকে তার বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে শনিবার সকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২০ এর সীমানা অংশের একটি ঝিরিতে তার লাশ পাওয়া যায়।

এপিবিএন জানায়,” স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে সকালে পুলিশ আগে থেকেই নিখোঁজ থাকা শামসুল আলম এর মরদেহ উদ্ধার করে।

তিনি বলেন, কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সেটি বের করার চেষ্টা চলছে ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে এপিবিএনের তৎপরতা অব্যাহত আছে।

উখিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, শুক্রবার রাতে মসজিদের ইমাম নিখোঁজ হন। পরেরদিন সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে কোনো সন্ত্রসী গ্রুপ তাকে হত্যা করেছে। এই ঘটনার রহস্য খোঁজার চেষ্টা চলছে।

সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসা, চোরাচালানসহ নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। যদি দ্রুততার সঙ্গে সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত না পাঠায় অথবা অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয় তা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে ক্যাম্পে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে শঙ্কিত জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও স্থানীয়রা। তাই তাদের দাবি, দ্রুত ক্যাম্পের অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে সাড়াশি অভিযান পরিচালনার।

উখিয়া কুতুপালং এলাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, ‘সম্প্রতি ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। ক্যাম্প ভিত্তিক মাঝি (নেতা), সাব-মাঝি, স্বেচ্ছাসেবকদের খুন করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের অবস্থান ঘোষণা করে যাচ্ছে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি নুর মুহাম্মদ সিকদার বলেন, ক্যাম্পের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সবসময় সক্রিয়। সন্ত্রাসীদের ভারি অস্ত্রের ভয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে ক্যাম্পে একের পর এক খুনের ঘটনা জন্ম দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।

তিনি আরও বলেন, কাজের সন্ধানে আশ্রয়শিবির ছেড়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকে পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।

তিনি আশংকা করে বলেন, ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

উখিয়ার প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার বলেন, ক্যাম্পে সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই বাহিনীগুলোকে এখনি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে।

তাই রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমনে ক্যাম্পে সাড়াশি অভিযান পরিচালনার করা এবং তাদের হাতে থাকা ভারী অস্ত্রগুলো যাতে উদ্ধার করার জোর দাবী জানান।