উখিয়া-টেকনাফে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিতে দিশেহারা ভাড়াটিয়া

এম,এস রানা, উখিয়া
সাম্প্রতিক সময়ে উখিয়া টেকনাফে দফায় দফায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন  ভাড়াটিয়ারা। ভাড়া বৃদ্ধির আইন থাকলেও সরকারের নজরদারী ও সদিচ্ছার কারণে তার কোন তোয়াক্কা করেছেন না বাড়ির মালিকরা। নিজেদের ইচ্ছামত বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কোন কোন বাড়ী ওয়ালা বছরে ১ বার ভাড়া বাড়ান, কোন কোন ভাড়াটিয়ার অভিযোগ তাদের বাড়ীর মালিক এক বছরে ২ বার বৃদ্ধি করেন বাড়ী ভাড়া। রোহিঙ্গা আসার পর থেকে বাড়ি ভাড়া যেন লাগামহীন ঘোড়ায় পরিণত হয়ে গেছে।
বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট বিগত দিনে যে বাসা ৫ হাজার টাকায় ভাড়া ছিল বর্তমানে তা বেড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বর্তমানে উখিয়াতে বহুতল ভবন তৈরীর হিড়িক পড়েছে। আবাসন আইনকে তোয়াক্কা না করে ঝিলে বিলে কিংবা ধানি জমি ভরাট করে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বহুতল ভবন। টার্গেট ভাড়া দিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাঠ হওয়া।
অনেকে নিজের শখের বাড়িটি ভাড়া দিয়ে অধিক টাকার লোভে ভাড়া দিয়ে বারান্দায় বসবাস করে আসছে। বলতে গেলে যে যার যতঠুক সম্ভব বাড়ি তৈরী করে ভাড়া দেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ছোট ১ রুমের একটি টিনের ঘরও ৫ হাজার টাকার নিচে ভাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে না।
এ প্রবণতা বৃদ্বি পেয়েছে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষাধিক। তাদের সেবা দিতে দেশ বিদেশের শতাধিক এনজিও প্রতিষ্টান কাজ করে যাচ্ছে। এসব এনজিও প্রতিষ্টানে দেশের বিভিন্ন জেলা হতে হাজার হাজার নারী পুরুষ কর্মি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব এনজিও কর্মিদের থাকার বাসা বাড়ি প্রয়োজন হওয়াতে সম্প্রতিক সময়ে বিপুল বাসা বাড়ির প্রয়োজন হলে উপজেলা সুমহে এ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
এনজিও কর্মিদের নিকট হতে অতিরিক্ত বাড়ি ভাড়া আদায়ের প্রভাব পড়েছে পুর্ব থেকেই স্থায়ী ভাবে বসবাস করে আসা ভাড়াটিয়াদের উপর। বাড়ির মালিকেরা অতিলোভে পড়ে তাদের নিকট হতেও অতিরিক্ত বাড়ি ভাড়া আদায় করছে বলে ভুক্তভোগি অনেক ভাড়াটিয়া জানান। মালিকদের সাফ কথা আমাদের নির্ধারিত ভাড়া না দিলে বাসা খালী করে দেন, এখন ভাড়াটিয়ার অভাব নেই। অথচ তারাই রোহিঙ্গা আসার পুর্বে প্রতিযোগিতামূলক ছাঁড় দিয়ে ভাড়াটিয়া খুঁজতে ব্যস্ত ছিল।
উখিয়া টেকনাফে এ পরিস্থিতির ফলে এখানে বসবাসরত স্বল্প মধ্য আয়ের ভাড়াটিয়াদের এখন খুবই নাজেহাল অবস্থা। বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকরের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু এতে কোন সুফল বয়ে আসেনি বলে মনে করেন
ভাড়াটিয়ারা।
বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রনের জন্য ১৯৯১ ইং সালে একটি পুরানো আইন আছে। এ আইনে বলা হয়েছে,
ভাড়াটিয়ার কাছে কোন ধরণের জামানত বা টাকা দাবি করা যাবে না। অগ্রিম হিসাবে ০১ (এক) মাসের ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা নেওয়া যাবে না। প্রতি মাসে
ভাড়া পরিশোধের রশিদ দিতে হবে ভাড়াটিয়াদের।
কিন্তু এ সব আইনের ধার ধারে না বাড়িওয়ালারা। আর আইন যেন থেকেও নেই।
এদিকে, বাড়ির মালিকরা প্রতি বার ভাড়া বাড়ানোর সময় নানা অযুহাত দেখান। এগুলোর মধ্যে আছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি ইত্যাদি।
বাড়ি ভাড়া আইনে বলা আছে-সরকার ভাড়া নির্ধারনসহ এ সংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধানের জন্য নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দিতে পারবেন,  প্রশাসনেরর কোন প্রকার তদারকি না থাকায় এখানের বাড়ির মালিকরা দেশের প্রচলিত আইনের কোন তোয়াক্কাই করছেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাড়াটিয়া জানান, আমি এক বাড়িতে বিগত ১০ বছর যাবত ৩ হাজার টাকার ভাড়ায় বসবাস করে আসছি, রোহিঙ্গা আসার পর থেকে সেই বাসা ভাড়ি বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। এলাকায় যে হারে বাসা বাড়ির ভাড়া বৃদ্বি পাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে বউ বাচ্চা নিয়ে গাছ তলায় রাত কাটাতে হবে।