আজ সাক্ষাৎকার দেবেন প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা

টেকনাফ প্রতিনিধি •

কক্সবাজারের টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকারের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে তাদের সাক্ষাৎকার শুরু হবে। এ উপলক্ষে সোমবার ক্যাম্প ইনচার্জের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসকারীদের বিভিন্ন মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে টেকনাফের জাদিমোরা শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন বলেন, প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার মঙ্গলবার থেকে নেয়া হবে। এ জন্য ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসের পাশে বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে তিন হাজার ৩১০ রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। সাক্ষাৎকারের সময় উপস্থিত থাকবেন ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি।

এদিকে শিবিরের সামনের দোকানে রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে রাখাইন ভাষার লিফলেট পড়তে দেখা গেছে। ওই লিফলেটে প্রত্যাবাসনকারী রোহিঙ্গাদের কী করা হবে সেই বিষয়ে লেখা রয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি করাতে আলাদাভাবে নারী ও পুরুষদের সঙ্গে বৈঠক করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রোহিঙ্গা নুর বশর বলেন, ‘লিফলেটে প্রত্যাবাসনকারী রোহিঙ্গাদের প্রথমে এনভিসি কার্ড নিতে হবে বলে লেখা রয়েছে । তারপর নাকফুরা শিবিরে রাখা হবে। সেখান থেকে ছয় মাসের আইডিবি ক্যাম্পে নেয়া হবে। তাই কোনো রোহিঙ্গা নাগরিকত্ব ও সমঅধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার ফেরত যাবে না। কারণ মিয়ানমার সরকারকে কোনোভাবে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।  

রাখাইন ভাষার লিফলেটের ব্যাপারে টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা বদলুল ইসলাম বলেন, মূলত ন্যাশনাল ভ্যারিফিকেশন কার্ডকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে, তাদের প্রথমে এনভিসি কার্ড দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। কারণ আগেও রোহিঙ্গাদের এনভিসি কার্ড দেয়ার নামে প্রতারণা করে বিতাড়িত করা হয়।

২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে এক সঙ্গে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়ন চালায়। এতে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, এ সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।

এসব ঘটনার পর জাতিগত নিধন ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে মিয়ানমার। ফলে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়।