আত্মসমর্পণের পর ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আরো বেপরোয়া!

শাহীন মাহমুদ রাসেল :

আত্মসমর্পণের মধ্যেই ইয়াবার কেনাবেচা চলছে। আত্মসমর্পণ করে ১০২ জন কারাগারে থাকলেও মাদক দ্রুত নির্মূল হবে এমন আশা নেই। কক্সবাজার জেলায় তালিকাভুক্ত সহস্রাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ীরর মধ্যে ১০২ জন আত্মসমর্পণ করেছে, এমন খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে সরকার-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে সাধুবাদ জানালেও সামাজিক মাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ক্ষোভ, দু:খ বা হতাশা প্রকাশ করার মানুষের সংখ্যাই ছিল বেশি।

মাদকবিরোধী সম্পৃক্ত স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, কক্সবাজার জেলার অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ডিলার, শুধুমাত্র টেকনাফে ক্রসফায়ারের ভয়ে হাতে গুনা কয়েকজন আত্মসমর্পণ করলেও ভাঙেনি মাদক চেইন। আসছে ইয়াবা নানা পথে, নানা কৌশলে। ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। সীমান্ত পথে মাদকের প্রবেশ বন্ধ হয়নি। স্থলপথ ও জলপথ—দুদিক থেকেই ইয়াবা আসছে এখনো।

কক্সবাজার জেলার তালিকাভুক্ত প্রায় সহস্রাধিক মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গত শনিবার বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছে মাত্র ১০২ জন। এছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান এমনকি ক্রসফায়ারের ঘটনার পরও কক্সবাজার জেলায় কমছে না মাদক বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্য। আত্মসমর্পণ পক্রিয়ার মাধ্যমে বরং আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

গডফাদাররা কোথায়, এমন প্রশ্ন সর্বমহলে। অনেকেই বলছেন, আত্মসমর্পণ যারা করে করেছে, তারা শুধুমাত্র টেকনাফের, তাদের অধিকাংশই হয় চুনোপুঁটি, না হয় মধ্যম সারির মাদক ব্যবসায়ী। অভিযোগ উঠেছে, আত্মসমর্পণের পর থেকে কক্সবাজার জেলার তালিকাভুক্ত আরোও দেড় হাজা মাদক ব্যবসায়ীরা বহাল তবিয়তে মাঠ দাপিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের বেচাকেনা। স্থানীয় অনেকে অভিযোগ করেছেন, অনৈতিক সুবিধাও দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অসাধু কিছু সদস্য। অভিযান শুরুর পর পরই চিহ্নিত অনেক মাদক ব্যবসায়ী গাঢাকা দিয়ে থাকলেও আত্মসমর্পণের পর থেকে তারা জেলা থেকে দেশজুড়ে পুরো দমে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা পাচার, যা সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কিছু কিছু ধরা পড়ে। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের আগে পাঁচটি সংস্থা পৃথকভাবে তালিকা তৈরি করে। এসব তালিকায় সর্বমোট মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা চার হাজার। সবচেয়ে বেশি মাদক ব্যবসায়ী কক্সবাজারে।

এবিষয়ে ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, এই আত্মসমর্পণ আয়োজনের কোন সফলতা নেই, এই আয়োজন বরং অন্যান্য ইয়াবার পৃষ্ঠপোষকদের স্বস্তি যোগিয়েছে। প্রায় সবাই এলাকায় নতুন করে মাদকের তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরোও বলেন, মাত্র ১০২ জন ও ক্ষুদ্র মাদক বিক্রেতাদেরকে আত্মসমর্পণ করার সুযোগ দেয়ার কারণে গডফাদারদের বহাল তবিয়তে ইয়াবার বাজার পূনর্বাসন করার সুযোগ করে দিয়েছে।

ঝিলংজা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শরীফ উদ্দিন হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, দেশজুড়ে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান হলেও আমার ঝিলংজার খরুলিয়ায় কোন অভিযান হয়নি। অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত লিয়াকত, শওকত আলী পুতুদের মতো কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী থাকলেও তারা কেউ আত্মসমর্পণ করেনি। কিন্তু খরুলিয়া এলাকার শীর্ষ মাদক চোরাকারবারিদের অবাধ বিচরণ। শুধু তাই নয়, নদী পথে সহজ যোগাযোগে প্রভাবশালী এই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা এখানে গড়ে তুলেছে একাধিক মাদক সিন্ডিকেট আর চোরাকারবারীর রমরমা ব্যবসা।

বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় ইয়াবার আরোও কয়েকশ গডফাদারের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর কর্মকর্তারা জড়িত। ওই সকল কর্মকর্তা এসব গডফাদার থেকে নিয়মিত পাচ্ছেন মাসোহারা। এছাড়া কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠান ও বিদেশে যাতায়াতের ব্যয়ভারও এই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা বহন করে থাকে। এর বদৌলতে ইয়াবা পাচারের রুটগুলো সুরক্ষিত রাখতে ভূমিকা রাখছেন। অপরদিকে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ অনেক নেতা, এমপিদের নির্বাচনী ব্যয়ভারও এই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বহন করে থাকেন। এজন্য এসব গডফাদাররা আইনের ঊর্ধ্বে। তাদের দাপটে স্থানীয় থানা পর্যায়ের কর্মকর্তারা রীতিমতো ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। ইয়াবা পাচারে সব জায়গায় তাদের প্রভাব রয়েছে। কেউ গ্রেফতার হলে তার জামিনও তারা পাইয়ে দেন। এদিকে দেশজুড়ে ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকলেও কক্সবাজারের সর্বত্র এখনো এরা অপ্রতিরোধ্য। এ পর্যন্ত বড় কোনো ইয়াবা কারবারি আটকের খবরও পাওয়া যায়নি। কক্সবাজারের ইয়াবা গডফাদাররা রয়েছে বহাল তবিয়তেই।

র‍্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ইয়াবার উৎসভূমি টেকনাফসহ কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত করতে কাজ চলছে র‍্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ইয়াবা চোরাচালান ও মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে তথ্য দিতে তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।