ইয়াবায় সাবেক এমপি বদির এমনই পরিণতি!

তোফায়েল আহমেদ, কালেরকন্ঠ :

ইয়াবার কারণে ডজন ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইয়াবা কেড়ে নিয়েছে বাবার বুক থেকে সন্তানকে, কেড়ে নিয়েছে বাবা এবং স্বামীসহ অগণিত স্বজনকে।

অনেক সুখের সংসারকে ইয়াবা করে দিয়েছে তছনছ। মরণ ট্যাবলেট ইয়াবার টাকায় সুরম্য দালানের মালিক হলেও সেই দালানে এক রাতও ঘুমাতে পারেননি অনেকেই।
কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করলেও ইয়াবা কারবারি সেই টাকাও ভোগ করতে পারেননি-এরকম সংখ্যাও অগণিত। ইয়াবার টাকায় ক্ষমতায় গিয়ে সেই ক্ষমতার স্বাদও নিতে না পারা জনপ্রতিনিধিও কম নেই। তেমনি কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবায় একজন মানুষের জস-খ্যাতিসহ ক্ষমতার মসনদ হারানোরও ইতিহাস রয়েছে।

সীমান্তের এমনই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের বিগত দুইবারের নির্বাচিত এমপি আবদুর রহমান বদি। এমন সব মন্তব্যই কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মুখে মুখে ঘুরে ফিরছে।

অনেকেরই অভিযোগ সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির কারণেই আজ টেকনাফ সীমান্তের এত বদনাম। অথচ সেই ইয়াবায় সাবেক এমপি বদির মসনদ কেড়ে নিয়েছে। যে এমপি বদিকে ছাড়া টেকনাফ সীমান্তে কোনো সভা-সমাবেশ করার চিন্তাও করা যায়নি- সেই এমপি বদির স্থান হয়নি আজ শনিবারের ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে। এ কারণেই লোকে বলছে- ইয়াবার পরিণতিতে আজ ক্ষমতা ছাড়া এমপি বদি।
আজ শনিবার টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির স্থান হয়নি। সেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আবদুর রহমান বদি প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। উপর্যুপরি দুইবার এমপি থেকে তিনি সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফ উপজেলা দুইটিতে বনে যান ‘অঘোষিত হিটলার।’

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে বলাবলি রয়েছে, এই দশটি বছর ধরে সীমান্ত উপজেলা দুইটিতে সাবেক এমপি বদির ঈশারা ব্যতিত গাছের পাতাও নড়েনি। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এখনো অসন্তুষ রয়েছে, সাবেক এমপি বদি এই উপজেলা দুইটির কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সব সময় ‘আপনি’ না বলে ‘তুমি’ সম্বোধন করেছেন। এক কথায় সাবেক এমপি বদির অনুমতি ছাড়া উখিয়া-টেকনাফ থানা দুইটিতে কোনো জিডি পর্যন্ত লিপিবদ্ধ হয়নি।

শুধু তাই নয়, এমপি বদি উপজেলা দুইটিতে ছিলেন যেন এক ‘মূর্তিমান আতংক।’ এমপি বদির হাত থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পর্যন্ত রেহাই পাননি। উখিয়া উপজেলার একজন নির্বাহী কমকর্তাকে একটি নির্ধারিত সভায় বিলম্বে যোগ দেওয়ার অভিযোগে তিনি (এমপি বদি) চপেটাঘাত করেছিলেন। তাঁর (এমপি বদি) হাতে প্রহৃত হয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাচন কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, বন কর্মকর্তা, শিক্ষকসহ নানা পেশার কমপক্ষে ২৬ ব্যক্তি।

এমনই ক্ষমতাধর ব্যক্তিটির স্থান হয়নি আজকের ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে। উপরন্তু সাবেক এমপি বদির স্থলে মঞ্চে বিশেষ অতিথির স্থান হয়েছে একই আসনে গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচিত এমপি মিসেস শাহিন আক্তারের। মিসেস শাহিন আক্তার সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির স্ত্রী। সদ্য সমাপ্ত একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবদুর রহমান বদি দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় দল তাঁর স্ত্রীকে মনোনয়ন দেয়।

এমপি আবদুর রহমান বদির দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া প্রসঙ্গে সেই সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সীমান্তের ইয়াবা পাচার নিয়ে আবদুর রহমান বদি বিতর্কিত হয়ে পড়ায় দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি একে একে ৫টি ইয়াবা সংশ্লিষ্ট পাচারকারীদের সরকারি তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন।

সীমান্তের ইয়াবা সংশ্লিষ্ট এমন একজন দাপুটে সাবেক জনপ্রতিনিধি আবদুর রহমান বদিকে মঞ্চে না দেখে আজ লোকজনের মুখে মুখেই খনার বচনটি উচ্চারিত হচ্ছিল- ‘বাঘের বল (শক্তি) ১২ বছর।’ টানা ১০ বছরের একজন এমপি’র মসনদ হারানোর প্রসঙ্গে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ গুরা মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন- ‘সাবেক এমপি বদিকে ইয়াবা এরকমই পরিণতি ডেকে এনে দিয়েছে।’