উখিয়ায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে অর্ধলক্ষ মানুষ

(প্রবল বর্ষনে উখিয়ায় বন্যা ও পাহাড় ধসে নিহত ৬ জনের লাশ উদ্ধার)

আবদুল্লাহ আল আজিজ ♦

কয়েকদিনের প্রবল বর্ষনে উখিয়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কারনে ভয়াবহ দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। এই পযর্ন্ত বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া ও পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহত ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুরো উপজেলার অধিকাংশ এলাকার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক যোগাযোগসহ অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ঢুবে থাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল ১২ঘন্টা। এলাকার মৎস্যঘের, পানের বরজ, ক্ষেত-খামারসহ গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখন পর্যন্ত উপজেলার কোথাও সরকারি পক্ষথেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরন হয়নি।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, উখিয়ার বন্যা পরিস্থিতির অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিটি এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

তিনি জানান, আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদের সাথে যোগাযোগ করে এলাকার জনগনকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়ার কাজ চালিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র গোলোতে নিয়ে গেছি। সাইক্লোন সেন্টার ও স্কুল গুলোতে বন্যার আক্রান্ত জনগনকে সরিয়ে নেওয়াসহ প্রতিটি এলাকার ব্যাপারে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। এলাকার জনগনের প্রাণ রক্ষার ব্যাপারে যা যা করনীয় সবকিছু করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে উখিয়ার বন্যার ব্যাপারে জেলা প্রসাশক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও গত বুধবার ভোররাত থেকে উখিয়ায় বিরামহীন একনাগাড়ে বৃষ্টি হতে থাকে। এতে পুরো উপজেলার নিম্নাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয় ধ্বসে পড়ে এলাকার শত শত মাটির ঘরবাড়ি। বন্যার পানি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ ২ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন, উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাই ছড়ি এলাকার জাফর আলমের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ছামিরা আক্তার (১৪) ও রত্নাপালং ইউনিয়নের মধ্যরত্না এলাকার অমূল্য বড়ুয়ার ছেলে পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র ইতন বড়ুয়া (১৪)। নিহতদের উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, নিহত মাদ্রসা ছাত্রী ছামিরার লাশ রেজুখাল থেকে দুপুরের দিকে উদ্ধার করা হয়।

রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী জানান, বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়া ইতন বড়ুয়া। এদিকে বুধবার সন্ধায় সময় রত্নাপালং ইউনিয়নের সাদৃকাটা নামক এলাকায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে বন্যার পানি দেখে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মোঃ ইসলাম সাওদাগর (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার রাত ৮টার দিকে ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে পড়ে শাহারিয়ার বাপ্পি নামের এক শিশু মারা গেছে। লাশ উদ্ধার করে বৃহস্পিবার সকালে শিশুটিকে দাফন করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিংড়ি ঘের সহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া উখিয়ার পার্শ্ববর্তী ঘুমধুমে পাহাড় ধসে চেমন খাতুন (৫৫) নামে এক মহিলা মারা যায়।

প্রতি বছর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বর্ষা এলেই উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের নানামুখী তৎপরতা চোখে পড়লেও বছরের অন্য সময়ে এনিয়ে আর কোন কথা হয় না। যে কারণে প্রতি বর্ষা মৌসুমে দুর্ঘটনা ঘটছে।

২০১১ সালে এ উপজেলার ভালুকিয়া ও আমতলী এলাকায় পাহাড় ধ্বসে ১২ জনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আবারো পাহাড় ধসের মতো ভয়াবহ অঘটন ঘটতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের জরিপমতে এ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ অনিশ্চিত বসবাস করছে।

বিশেষ করে জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাটুয়ার টেক থেকে মনখালী পর্যন্ত সাগর ঘেঁষা ইনানীর পাহাড়ে রাজাপালং ইউনিয়নের দোছরী, হরিণমারা, পালংখালী ইউনিয়নের থিমছড়ি, রত্না পালং ইউনিয়নের রেজু আমতলী সংলগ্ন গর্জনবনিয়া আছারতলীসহ প্রভৃতি পাহাড়ি এলাকায় এখন ঝুঁকিপূর্ণ জনবসতি এলাকায় পরিণত হলেও দেখার বা বলার কেউ নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, অর্থবিত্ত ও ভূমিহীন বেশির ভাগ ছিন্নমুল পরিবার সরকারি বনভূমির সুউচ্চ পাহাড়ে ঝুকি নিয়ে বসবাস করছে। দুর্যোগ মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অভিনব প্রচারণা চালিয়ে সর্বসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার কথা বললেও কে শুনে কার কথা। যে কারণে অতি বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরো বলেন, এসব পরিবারগুলোতে স্থায়ীভাবে সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত এ পরিস্থিতির কোন উন্নতি হবে না। উপরন্তু ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা ধরা রয়েছে।