উখিয়ায় ফসলী জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে তামাক চাষ

বিশেষ প্রতিবেদক :

মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ইয়াবা ও হরেক রকমের বোতলজাত মাদক দ্রব্যের পাশাপাশি স্থানীয় ভাবে তৈরি হচ্ছে চোলাই মদ। হাতের নাগালে মাদক পাওয়ার কারণে একদিকে যেমন মাদক সেবীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে ধুমপায়ীর সংখ্যা। তামাকজাত পণ্যের মোড়কে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বাক্যটি লিখা থাকলেও ধুমপান নিয়ন্ত্রণে সরকারী পদক্ষেপ হতাশা ব্যঞ্জক। উপরোন্তু উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভাবে তামাক চাষ করতে দেখা গেছে। যা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক হুমকি বলে বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত ব্যক্ত করলেও কার্যথ ধুমপায়ীদের তেমন কোন মানহানিকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ধূমপায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশংকা জনকভাবে। ফলে মানুষ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে চিকিৎসকদের অভিমত।
বিশ্বস্বাস্থ্যর এক জরিপে দেখা গেছে, এদেশের ১৩-১৫ বছর বয়সী তরুন-তরুণীদের ৭ শতাংশ তামাক সেবন করে। প্রতিবছর এ সংখ্যা বাড়ছে ১০-১২ শতাংশ হারে। বিশেষজ্ঞদের মতে তামাকের যথেচ্ছ ব্যবহারে সুযোগের কারণে দেখা দিয়েছে সামাজিক অবক্ষয়। দামে সস্তা হওয়ায় তরুণ তরুণীরা পারিবারিক গন্ডি থেকে বেরুতে পারলে কিংবা কয়েকজন একসাথে মেলামেশা করতে পারলে তামাক সেবন করছে। বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় দেখা যায়, পৃথিবীতে সবচেয়ে তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এদেশের ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ ৪ কোটি ১৩ লক্ষ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ সিগারেট, বিড়ি ও তামাক সেবন করে। প্রতিবছর তামাক সেবন জনিত অসুখে মারা যাচ্ছে ৯৬ হাজার মানুষ। তবে এসংখ্যা বর্তমানে আরো বাড়তে পারে বলে সচেতন মহল দাবী করছেন।
উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, তিনি নিজেও একসময় ধুমপান করতেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি ধুমপান করা ছেড়ে দিয়েছেন। বিধায় শারীরিক ভাবে অনেকটা উন্নতি হয়েছে বলে তিনি ধারণ করছেন। তিনি আরো বলেন, সিগারেট, বিড়ি খাওয়া যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তারা কোন না কোন সময়ে মাদক সেবনে অভ্যাস্ত হয়ে পড়বে। তাই সরকারের উচিত তামাকজাত পণ্যের উপর ভ্যাট ও কর আরোপ আরো বৃদ্ধি করা যাতে উচ্চ মূল্যের কারণে ছাত্রছাত্রী যুবকেরা তামাক জাত পণ্যের ব্যবহার ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
উখিয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ এম ফজলুল করিম জানান, তামাকের সিড়ি বেয়ে মাদকের হাতে কড়ি। তাই তিনি সিগারেট, বিড়ি সেবন থেকে ছাত্রছাত্রীদের দূরে রাখতে কলেজ ক্যান্টিনে সিগারেট, বিড়ি বিক্রির উপর বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন। যাতে ছাত্ররা ধুমপান করতে না পারে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন প্রকাশ্য ধুমপান করলে ৫০ টাকার জরিমানার বিধান রাখা হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। যে কারণে মানুষ প্রকাশ্য ধুমপান করছে।
সরেজমিন হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পাগলির বিল, পাতাবাড়ী, থিমছড়ি, খেওয়াছড়ি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত একর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী আবুল আলা ও জয়নাল উদ্দিন সহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, ইতিপূর্বে এখানে এর চাইতে দ্বিগুন জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। গ্রামবাসীর বাধাঁর কারণে এখন অনেকটা কমে গেছে। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শরিফুল ইসলামের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, তামাক চাষের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।