উন্নয়নের মহাসড়কে কক্সবাজার

এম. বেদারুল আলম :

অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়ন, মেগা প্রকল্প গ্রহন, সরকারের বিশেষ নজরের কারনে পাল্টে যাচ্ছে কক্সবাজারের চেহারা। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে বর্তমান সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে কক্সবাজারের যে সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে তা অতীতে কোন সরকার করেনি।

গত ৯ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজারকে ঘিরে অর্ধ শতাধিক প্রকল্প গ্রহন ও দুই তৃতীয়াংশ বাস্তবায়ন করায় মূলত পাল্টে যাচ্ছে কক্সবাজারের চেহারা। মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হেলালুদ্দিনসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে কক্সবাজারের অনেক কৃতি সন্তান কর্মরত থাকার কারনে আলাদা একটি গুরুত্ব বহন করে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার। ফলে সিঙ্গাপুর অথবা মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের মত কক্সবাজারের আলাদা অবয়ব শীগ্রই পাচ্ছে জেলাবাসি।

জানা যায়, ২০০৮ সালের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধারাবাহিক উন্নয়নের সূচনা হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর কক্সবাজারেই অর্ধশত মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। তৃতীয় মেয়াদে এসে অনেক প্রকল্প আলোর মুখ দেখে। এরমধ্যে অন্যতম হলো মহেশখালীতে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এর ‘মাতারবাড়ি তাপভিত্তিক কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা মৌজায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যেটি নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ দশমিক ৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পটি জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর ‘এল.এন.জি ও কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এল.এন.জি ও কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মহেশখালী উপজেলার ৬টি মৌজা হোয়ানক, হেতালিয়া, কালারমারছড়া, হরিয়ারছড়া, পানিরছড়া, অমাবশ্যাখালীর ৫ হাজার ৬৪৬ দশমিক ৯৫ একর জমি অধিগ্রহন শেষে কাজ চলমান রয়েছে ।

এছাড়া মাতারবাড়িতে ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড নামে আরও একটি নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

ইলেক্ট্রনিক জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সম্পন্ন আরও একটি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের কাজ এগিয়ে চলছে। এই প্রকল্পটি নির্মাণের জন্য পেকুয়ার উজানটিয়ার করিয়ারদিয়া মৌজায় ১ হাজার ৫৬৯ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয় শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থাপিত হচ্ছে ইন্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প। ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণাধীন এই প্রকল্পটি নির্মাণের জন্য মহেশখালীর ধলঘাটা, কালারমারছড়া ও কালিগঞ্জ মৌজায় ৩৪ একর জমিতে কাজ চলমান।

এছাড়াও মহেশখালীতে স্থাপিত হচ্ছে বেজা কর্তৃপক্ষের ৫টি অর্থনৈতিক জোন। এগুলো হলো ১ হাজার ৭৮৪ একর জমির উপর ‘কক্সবাজার ফ্রি ট্রেড জোন’, ১ হাজার ৪৩৮ একর জমির উপর ‘মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন-১’, ৮২৬ একর জমির উপর ‘মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন-২’, ৬৭০ একর জমির উপর ‘মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন-৩।
অপরদিকে টেকনাফে ‘সাবরাং অর্থনৈতিক জোন’। হ্নীলা মৌজার জালিয়ারদ্বীপে ২৭১ একর জমিতে স্থাপিত হচ্ছে ‘জালিয়ারদ্বীপ অর্থনৈতিক জোন’। সেনাবাহিনীর কঠোর পরিশ্রমের ফল নান্দনিক মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এছাড়া চকরিয়ার বদরখালী সড়কের বাটাখালী ব্রিজের ২ কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য শূন্য দশমিক ১৬২২ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে। যেটি বর্তমানে নির্মাণাধীন।

সদরের খুরুশকুল-চৌফলদন্ডী-ঈদগাঁও সড়কের চৌফলদন্ডী ব্রিজ এপ্রোচে ৯ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় এর সুফল পেতে বসেছে লক্ষাধিক মানুষ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শেষের দিকে রয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের কাজ।

বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ে ৬৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯০০০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। ৪ হাজার ৪০৯টি ভূমিহীন পরিবারকে বাঁকখালী নদীর পূর্বপাশের খুরুস্কুল ইউনিয়নে পুর্নবাসন প্রকল্পের কাজ। এছাড়াও কক্সবাজারে নির্মান করা হয়েছে শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, মেডিকেল কলেজ, নির্মিত হচ্ছে রামুতে দ্বিতীয় বিকেএসপি, ভেটেনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।