উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী নিয়ে বিপাকে কক্সবাজার আওয়ামী লীগ

আবদুল আজিজ, বাংলা ট্রিবিউন :

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছে কক্সবাজার আওয়ামী লীগ। এ জেলার ৮ উপজেলার ৬টিতেই চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী মনোয়নপত্র জমা দিয়েছেন এবং নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।

দলের ব্যানারে একজনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও দলীয় বাধা না থাকায় একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। এখন ওই উপজেলাগুলোয় মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রচারে একপক্ষ অন্যপক্ষের নামে নিন্দামন্দ করছেন, যা নিয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে জেলা আওয়ামী লীগ। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও নির্দেশনা না থাকায় কোনও পদক্ষেপও নিতে পারছে না তারা।

আগামী ১৮ মার্চ চকরিয়া, ২৪ মার্চ রামু, মহেশখালী, পেকুয়া, উখিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও ৩১ মার্চ কক্সবাজার সদর উপজেলায় ভোট হবে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ৮৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৮ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন মনোনয়ন জমা দেন। এর মধ্যে কুতুবদিয়া ও উখিয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি উপজেলাগুলোয় দল মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি বিদ্রোহীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলা নির্বাচনে প্রচারণা চালাচ্ছেন উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদী। দলীয় প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে অধিকাংশ নেতাকর্মী অবস্থান নিলেও অনেকে সাঈদীর পক্ষেও কাজ করছেন।

পেকুয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম। অনেক নেতাকর্মী নিয়ে তিনি প্রচারণাও চালিয়ে আসছেন। এতে বেকায়দায় আছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল কাসেম।

রামু উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ রিয়াজুল আলমের বিপক্ষে শক্তভাবে অবস্থান নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল।

কক্সবাজার সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাইছারুল হক জুয়েলের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়তে ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের কক্সবাজার পৌরসভার ৪ বারের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয়, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরুল রাসেদ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মাদু ও সোহেল জাহান চৌধুরী।

টেকনাফে অওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মহেশখালী উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘এখনও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে করণীয় নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও দিক-নির্দেশনা আসেনি। তবে কোনও আওয়ামী লীগের কারও নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী যাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন, তিনিই আওয়ামী লীগ প্রার্থী। আমরা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’

এদিকে, জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারে অতীতের সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। এবারও উপজেলা পরিষদের নির্বাচন যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, চলতি মাসে আরও একটি ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব হবে।’